শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১১

কাজের ছেলে (যোগিন্দ্রনাথ সরকার )

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।

বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।

ওই তো ওখানে ঘুরি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!

এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।

সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১১

কোরবানি(এস. এম. জাকির হুসাইন)

কোরবানি হলো জীবনের একটি আবশ্যিক অঙ্গ।এটি হলো ধর্মবোধেরও একটি আবশ্যিক স্তম্ভ।এমন কোনো জীবন নেই যাকে কোনো না কোনো জিনিষ কোরবানি করতে হয় না।কোরবানির হাত থেকে কোনো রেহাই নেই।হয় আপনি মিথ্যাকে কোরবানি দিয়ে সত্যের দিকে ধাবিত হবেন,না হয় আপনি সত্যকে কোরবানি দিয়ে মিথ্যার দিকে ধাবিত হবেন।কোরবানি ছাড়া কোনো বিনিময় প্রাপ্তি সম্ভব নয়।আমি যদি পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করতে চাই,তাহলে আমাকে অনেক আনন্দ ফূর্তি খেলাধুলা ইত্যাদিকে কোরবানি করতে হবে এবং কেবল তখনই আমি আমার লক্ষ্য হাসিল করতে পারবো।সুতরাং আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি যে,কোরবানি হলো জগতের লেনদেনকে সক্রিয় করার একমাত্র উপায়।আমাকে কোনো না কোনো কিছু কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে,যদি আমি কিছু পেতে চাই-ছোট বা বড়,ভালো বা মন্দ।আমরা আমাদের ভ্রাতৃত্বকে,বন্ধুত্বকে,সততাকে কোরবানি ক'রে খুব সহজেই গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী অসত্‍ ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারি।আবার আমরা আমাদের অসততা,কু-কামনা,খারাপ প্রবণতা ইত্যাদিকে কোরবানি ক'রে সত্যের দিকে ধাবিত হতে পারি।

এখন আমরা একটি মৌলিক প্রশ্ন করতে পারি:কোরবানি কাকে বলে?

কোরবানি হলো ত্যাগ।আল্লাহ বলেছেন যে,আমরা কখনোই তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব না,যদি আমরা তাঁর জন্য আমাদের প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করতে না শিখি।
এই কথাটির মধ্যেই আল্লাহ কোরাবানির মর্মার্থ লুকিয়ে রেখেছেন।আমরা হযরত ইব্রাহীম(আ.)এর কাহিনী সবাই জানি।আমরা জানি যে,আল্লাহ তাঁকে তাঁর সন্তানকে কোরবানি দেয়ার কথা বলেছিলেন এবং তিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে সন্তানকে কোরবানি দিয়েওছিলেন।কিন্তু আল্লাহ তাঁর কোরবানিকে কবুল ক'রে একটি পশুকে জবাই ক'রে ফেললেন এবং তাঁর সন্তানকে তাঁর কাছে ফেরত দিলেন।এথেকে আমরা বুঝতে পারি যে,কোরবানি হলো আমার কোনো প্রিয় বস্তুকে সঠিকভাবে পাওয়ার একটি উপায়।ইব্রাহীম(আ.)তাঁর সন্তানকে কেবল তখনই ফিরে পেলেন যখন তিনি তাকে আল্লাহর পথে কোরবানি করার জন্য মন স্থির করলেন।

আমরা মূসা(আ.) এর কথা জানি।ফেরাউন মূসার কওমের পুরুষদেরকে হত্যা করত এবং নারী ও শিশুদেরকে বাঁচিয়ে রাখতো।মূসা(আ.) ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই তার মা-ও আতঙ্কিত হলেন এই ভেবে যে,তার ছেলেকেও হত্যা করা হবে।কিন্তু আল্লাহ তাকে প্রত্যাদেশ পাঠালেন,তিনি যেন তার সন্তানকে একটি বাক্সে ক'রে নদীতে ভাসিয়ে দেন।এর পরবর্তী কাহিনী আমরা কম -বেশী সবাই জানি।সেই বাক্সটি ভাসতে ভাসতে চ'লে গিয়েছিল ফেরাউনের বাড়ির সামনে,যেখান থেকে ফেরাউনের স্ত্রী তাকে তুলে নিয়েছিলেন এবং তাকে পোষ্য পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।তবে মূসা(আ.) তার মায়ের দুধ ছাড়া আর কারো দুধ খেতে চাননি।ফলে ফেরাউনের স্ত্রী খুঁজতে খুঁজতে সত্য ঘটনাটি না জেনেও মূসা(আ.) এর মায়ের সন্ধান পেলেন।এভাবে মূসা(আ.) এর লালন-পালনের দায়ভার আবারও তার মায়ের ওপরেই বর্তালো।এ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,মূসা(আ.) এর মা তার সন্তানকে ফেরত্‍ পেয়েছিলেন কেবল তখনই যখন তিনি তাঁকে কোরবানি করতে পেরেছিলেন।অর্থাত্‍ তাঁকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন।নিজের প্রিয়জনকে বা প্রিয়বস্তুকে সঠিকভাবে পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি ক'রে দেয়া।এখন-আবারও- আমাদের প্রশ্ন হলো:কোরবানি কি?
তিনি বললেন,'হে মূসা!তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হল।আর আমি তো তোমার ওপর আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।যখন আমি তোমার মায়ের মনে প্রত্যাদেশ দিয়েছিলাম এইভাবে:'তুমি তাকে (শিশু মূসাকে) সিন্দুকের মধ্যে রেখে নীল সমুদ্রে ভাসিয়ে দাও যাতে সমুদ্র ওকে তীরে ঠেলে নিয়ে যায় - ওকে আমার শত্রু ও ওর শত্রুর কাছে নিয়ে যায়।'আর আমি নিজ অনুগ্রহে তোমাকে প্রিয়দর্শন করেছিলাম যে,এই অবস্থায় তুমি আমার চোখের লালিতপালিত হবে।যখন তোমার বোন এসে বলল,' আমি কি তোমাদেরকে ব'লে দেব কে একে লালনপালন করবে?'তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলাম যেন তোমার মায়ের চোখ জুড়ায় আর তুমিও কোনো দুঃখ না পাও।আর (এরপর)তুমি একটি লোককে খুন করলে,তারপর আমি তোমাকে মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি দেই।আমি তো তোমাকে পরীক্ষার পর পরীক্ষা করেছি।তারপর তুমি কয়েকবছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বাস করেছিলে।হে মূসা!এরপর তুমি এসেছ নির্ধারিত সময়ে।
(সূরা তাহা, আয়াত :৩৬-৪০ )

আমরা জানা ঘটনার একটি অজানা রহস্যের দিকে মনোনিবেশ করতে পারি।ইব্রাহিম(আ.) এর বাবাও তার সন্তানকে কোরবানি করেছিলেন।তবে সে কোরবানি ছিল ঋণাত্মক অর্থে।তিনি তার অহমিকা বা অহঙ্কারকে টিকিয়ে রাখার জন্য তার সত্যাশ্রয়ী ছোট সন্তানকেও ত্যাগ করতেও দ্বিধা করেননি।শুধু ত্যাগ নয়,তিনি বিশাল অগ্নিকুণ্ড জ্বেলে তার মধ্যে ইব্রাহিম (আ.) কে ফেলে দিয়েছিলেন,যেন তিনি নিশ্চিহ্ন হয়ে যান।আমরা জানি যে আল্লাহ আগুনকে তার জন্য বেহেশতে রূপান্তরিত ক'রে দিয়েছিলেন।সেটি হলো আল্লাহ এবং ইব্রাহিম (আ.) এর মধ্যেকার সম্পর্কের ব্যাপার।তার বাবা তার প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছিলেন তা আমাদেরকে এখনও ভাবায়।শুরুতে তিনি বাবার দ্বারা পরিত্যাক্ত হয়েছিলেন।শেষ দিকে এসে ইব্রাহিম(আ.) আবার তার নিজের সন্তানকেও নিজে কোরবানি করলেন।কিন্তু একটু ভেবে দেখুন,এই দুই কোরবানির মধ্যে কি বিস্তর পার্থক্য ! ইব্রাহিম(আ.) বাবার আদর-ভালোবাসা পাবার সৌভাগ্য অর্জন করেননি।ফলে সেই ভালোবাসার প্রতি তার তৃষ্ণা রয়ে গিয়েছিল।এই অভাব বোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার মধ্যে হয়তো তার নিজের সন্তানকে পূর্ণাঙ্গভাবে ভালোবাসার একটি ইচ্ছা জেগে থাকতে পারতো।কিন্তু সন্তানকে ভালোবাসার মধ্যে আমাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বজনপ্রীতি এবং সংকীর্ণতা কাজ করে।ফলে আমরা ভালোবাসার নামে সন্তানকে প্রশ্রয় দেই।আল্লাহ তাই তাঁকে বললেন তাঁর সন্তানকে কোরবানি করতে,যেন সন্তানের প্রতি তাঁর যে মমত্ববোধ রয়েছে তা থেকে তার ভ্রান্তির অংশটুকু দূর হয়ে যায়,বাকী থাকে শুধুই বিশুদ্ধ ভালোবাসা।এই ভালোবাসা নিজের জন্য নয়,সন্তানেরই জন্য।আমরা অধিকাংশ মানুষ আমাদের সন্তানদেরকে প্রচণ্ড ভালোবাসি।কিন্তু সেই ভালোবাসার মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণে খাদ রয়ে গেছে।
আমরা তাদেরকে আমাদের নিজেদের চেয়েও ভালোবাসি,তবে তাদের মঙ্গলের জন্য নয়,আমাদেরই ভালোবাসার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।তাই তো যখন আমাদের কোনো সন্তান আমাদের পছন্দ মতো বিয়ে করতে না চায় তখন আমরা আমাদের অহঙ্কারে আঘাত পেয়ে বিমর্ষ হয়ে প'ড়ে থাকি এবং সেই সন্তানকে ত্যাগ করতেও দ্বিধা করি না।

ইব্রাহিম (আ.) এর প্রসঙ্গে আবারও ফিরে যাওয়া যাক।তিনি যখন তাঁর সন্তানকে কোরবানি করেছিলেন তখন কোরবানি সংঘটিত হয়েছিল-একটি নয় - দুটি।আল্লাহ কোরবানি করেছিলেন একটি পশুকে আর ইব্রাহিম(আ.) কোরবানি করেছিলেন তাঁর নিজের সন্তানকে।আসলে অবশেষে আল্লাহ যা করলেন সেটিই গ্রহণযোগ্য।কারণ কোরবানি মানে হলো ত্যাগ এবং আমরা কেবল আমাদের অন্তরে লুকায়িত পশুত্বকেই ত্যাগ করতে পারি।ভালো কোনো কিছুকে ত্যাগ করার অধিকার আমাদের নেই,যদিও আমরা তা অহরহ ক'রে চলেছি,যা আমাদের তরফ থেকে অনধিকার চর্চা।ইব্রাহিম (আ.) তাঁর একটি মাত্র সন্তানকে সঠিকভাবে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন ব'লেই পরবর্তিতে গোটা মানবজাতির পিতায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলেন।তিনি গোটা মানবজাতির পিতা হবেন ব'লেই একটিমাত্র সন্তানের পিতা হয়ে ব'সে থাকেননি।এ দিকে ইব্রাহিম (আ.) এর পিতা আজর ভুল জিনিসটিকে কোরবানি ক'রে ফেলেছিলেন,ফলে তিনি তার নিজের সন্তানের পিতা হওয়ার যোগ্যতা হারালেন।এই দুটি বিষয়কে একসঙ্গে বিবেচনা করলে আমরা জীবনের একটি গূড় রহস্য আবিষ্কার করতে পারি।ইব্রাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে তাঁর পুত্র সন্তান লাভ করেছিলেন।সে কারণে পুত্র সন্তানের প্রতি তাঁর স্বাভাবিক দুর্বলতা ছিল।সেই দুর্বলতাকে ধ্বংস ক'রে কেবল তাঁর চিরস্থায়ী সবল অংশটুকুকে টিকিয়ে রাখার জন্যই আল্লাহ তাঁকে কোরবানির কাজে প্রবৃত্ত করলেন।

আমরা যখন কেউ একটি সন্তান লাভ করি,তখন আমরা মনে-প্রাণে এ কথাই ভেবে ব'সে থাকি যে,সে সন্তানটি শুধুই আমার।ফলে আমার সন্তান যখন বড় হবে,তখন রোজগার ক'রে শুধু আমাকেই খাওয়াবে,শুধু আমারই সেবা করবে।আমাদের এ জাতীয় ভাবনার মধ্যে শুধু সংকীর্ণতা এবং স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই নেই।এই জাতীয় প্রবণতা যেন ইব্রাহিম (আ.) এর অন্তরকে প্রভাবিত না করে,এই জন্য আল্লাহ তাঁকে তাঁর সন্তানকে কোরবানি করতে বলেছিলেন।নিজের সন্তানকে কোরবানি করা মানে মোহ নয়,ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়,বরং ভালোবাসাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।কিন্তু আমাদের ভালোবাসার সংঙ্গে তার বিরাট একটি আংশ জুড়ে যে মোহ বিরাজ করছে,তা আমরা অধিকাংশ সময়ে আবিষ্কার করতে পারি না,এবং সে ব্যাপারে বেমালুম ভুলে থাকি।তাই তো ইব্রাহিম (আ.) এর এই ঘটনাটি স্মরণ ক'রে আমরা আমাদের ভ্রান্তি থেকে স'রে আসার সুযোগ পাই।

সন্তানকে কোরবানি করার একটি অর্থ হলো নিজের কাছে এই বিষয়টি স্পষ্ট ক'রে তোলা যে,এই সন্তান শুধু আমার সন্তান নয়।এই সন্তান গোটা সমাজের সন্তান।ফলে এই সন্তানকে এমনভাবে গ'ড়ে তুলবো,যেন সে আর দশটা মানুষের জন্য উপকারী হয়ে উঠে।অর্থাত্‍ আমি আগে থেকেই স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকব যে,এই সন্তান শুধু আমারই সেবা করবে না,গোটা মানবজাতির সেবা করবে।এই সন্তান শুধু আমার জন্যই পরিশ্রম করবে না,গোটা মানবজাতির জন্য পরিশ্রম করবে।বলা বাহুল্য,আমরা যখন ঈদুল আজহার সময়ে হাজার হাজার পশু কোরবানি দেই,তখন এই ধারনাগুলি আমাদের মাথার মধ্যে আসে না,বরং আমরা কোরবানির একজাতীয় প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হই - কে কত বড় পশু কোরবানি দিতে পারে,কে কোরবানির উদ্দেশ্যে কত বেশি টাকা ব্যায় করতে পারে।সেই প্রতিযোগিতা আমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন ক'রে রাখে।তাই তো আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন বলেছেন যে,তাঁর কাছে কোরবানির পশুর রক্ত পৌছায় না,পৌছায় আমাদের চিত্ত বা হৃদয়।

"আর উটকে তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি।তোমাদের জন্য ওতে মঙ্গল রয়েছে।সুতরাং সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে ওদেরকে জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম নাও।যখন ওরা কাত হয়ে প'ড়ে যায় তখন তোমরা তা থেকে খাও আর খাওয়াও যে চায় না তাকে,আর যে চায় তাকেও।এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদেরকে অধীন ক'রে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।আল্লাহর কাছে ওদের মাংস বা রক্ত পৌছায় না,বরং পৌছায় তোমাদের ধর্মনিষ্ঠা।এভাবে তিনি ওদেরকে তোমাদের অধীন ক'রে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর,এজন্য যে তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন।সুতরাং তুমি সত্‍কর্মপরায়ণদের খবর দাও।"
                                                                                                                                                    (সূরা হজ্জ,আয়াত:৩৬-৩৭)

এ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে,কোরবানি কোনো বাহ্যিক কাজ নয়,কোরবানি হলো অন্তরের ভিতরের কাজ।আবার এর মাধ্যেমে আমরা এও বলতে চাচ্ছি না যে,বাহ্যিক অর্থে আমরা কোরবানি বলতে যা বুঝি,তা করা যাবে না।বিষয়টি তা নয়।সব বাহ্যিকতা একটি উপায় মাত্র -এই কথাটি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে।আমাদের আসল লক্ষ্য হলো অন্য কিছু।সেই লক্ষ্যকে ভুলে গিয়ে শুধু বাহ্যিকতার আশ্রয় নিলে তা হবে নিছক সামাজিক আচরণ এবং কৃষ্টিকালচারের চর্চা।এই কথাগুলিকে মনে রেখে আমরা যদি কোরবানি করি,তাহলে আমাদের কোরবানি আমাদের জীবনকে পবিত্র ক'রে তুলবে।আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এবং ব্যক্তিদের সাথে আমাদের সম্পর্ককে বিশুদ্ধ ক'রে তুলবে।সম্পর্ক ত্যাগ করা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়।কিন্তু সম্পর্ক থেকে উদ্ভুত মোহ এবং মোহাচ্ছন্নতাকে ত্যাগ করা আমাদের দায়িত্ব।



শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১১

খোঁপার মত ফুলদানি আর নেই(এস. এম. জাকির হুসাইন)

খোঁপাটাকে এগিয়ে দাও                 এই নাও

            কী দেব যে?
ইচ্ছে করে দাঁড়িয়ে থাকি আঙুল গুঁজে।

           আবার ভাবি--তাও কি হয়?
           খোঁপার জন্য আঙুল তো নয়,
                                     ফুল,
তবু কেন হঠাত্‍ তুমি এলিয়ে দিয়ে চুল
          খোঁপাটাকে দিলে খুলে?
এই দেখ এক ফুল রয়েছে আমার এ আঙুলে
          তোমার খোঁপায় পরিয়ে দিতাম যেই,
বুঝিয়ে দিতাম খোঁপার মত ফুলদানি আর নেই।

"কল্পকণা"(রোহেল পাবলিকেশন্স,৩৮/২ ক,বাংলাবাজার,ঢাকা)

বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০১১

শোষণ(এস. এম. জাকির হুসাইন)

মুমূর্ষ মাছির পিছে একলাখ পিপঁড়ের ঝাঁক
গিঁটেল সুতোর মতো আঁকা-বাঁকা দীর্ঘকায় সারি
বড় আগ্রহ দেখাতে পারে ওরা
যখন শিকার পায় সামনে
এবং নিজেরাও থাকে দলবদ্ধ ঐক্যের শিকলে!

অতি নিকট থেকে দেখলাম
একটা ডানায় ডিগবাজি খেতে খেতে খেতে
শিকারীর পদানত হচ্ছিল বারবার
হতভাগ্য সেই মাছিটা
তার পিঠের ওপর একঝাঁক,ডগায়,প্রায়-পঙ্গু ঠ্যাঙে
এবং মগজে তিনশো ক'রে শিকারী
শিথিল চোখের মধ্যেও ঢুকে পড়ে মারাঠী দস্যুর মতো

একটু পরেই ও হারাবে ওর বাকি গতিটুকু
তারপর দশটি শিকলে-বাঁধা হয়ে কাঠের গুড়ির মতো
গড়াতে গড়াতে যাবে পাশের ঝোপটার দিকে
যেটুকু এখনও হয়নি শেষ
সেটুকু গর্তে নিয়ে চোলাই ক'রে খাবে
পিঁপড়ের সেই র্দুবৃত্ত শিকারীর দল-

দূর থেকে ওদের পিছনে পিছনে ছুটব
ভালো ক'রে খুঁজে দেখবো গর্তটা কোথায়!!

প্রভাতী(কাজী নজরুল ইসলাম)

ভোর হলো
দোর খোলো
           খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে
জুঁই শাখে
           ফুল-খুকী ছোট রে!
            খুকুমণি ওঠ রে!
রবি মামা
দেয় হামা
           গায়ে রাঙা জামা ঐ,
দারোয়ান
গায় গান
           শোনো ঐ,'রামা হৈ!'
ত্যজি নীড়
ক'রে ভীড়
            ওড়ে পাখী আকাশে,
এন্তার
গান তার
           ভাসে ভোর বাতাসে!
চুলবুল
বুলবুল
           শীস্ দেয় পুষ্পে,
এইবার
এইবার
           খুকুমণি উঠবে!
খুলি' হাল
তুলি' পাল
           ঐ তরী চ'ললো
এইবার
এইবার
           খুকু চোখ খুললো ?
আলসে
নয় সে
           ওঠে রোজ সকালে,
রোজ তাই
চাঁদা ভাই
           টিপ দেয় কপালে।
উঠ্ল
ছুটল
           ঐ খোকাখুকী সব,
'উঠেছে
আগে কে'
           ঐ শোনো কলরব।
নাই রাত
মুখ হাত
           ধোও,খুকু জাগো রে!
জয় গানে
ভগবানে
           তুষি' বর মাগো রে!

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১১

সেই অনন্য গল্পটি(এস.এম.জাকির হুসাইন)

এক দেশে এক যে ছিল সুখ
আর ছিল একটি দেহ।
দেহ চাইল সুখকে অনুভব করতে
আর তাই সে কামনা করল একটি প্লাবন।
ঝরঝর বৃষ্টি ঝরল তাই।
সপ্নে প্লাবিত হয়ে--এবং অতঃপর
শক্ত মাটিতে সেই স্বপ্ন রোপন করার ইচ্ছায়--
দেহ তার প্রতিবিম্বকে দেখল সেই বিপুল প্লাবনে--
এবং তৃষ্ণার্ত হলো নিজস্ব কায়দায়।
দুইকে এক করার জন্য ছিল একটি বৃত্ত--নাম তার মন।
এবং সেই বৃত্তেরও ছিল প্রতিবিম্ব।
ফলে ছিল না কোনো ব্যক্তিসত্তা--
শুধু ছিল দুইয়ের মিলনের মধ্য দিয়ে কোনো এক ব্যক্তিসত্তায়
ধীরে ধীরে পৌছতে থাকার একটি ধারণা।
আর এখানেই লুকিয়ে ছিল একটি পোকা।
প্রতিটি মিলন সৃষ্টি করল আরো কিছু পার্থক্য এবং বৈচিত্র্য।
সুখ--ঐক্যের বৃক্ষের ফল--তীলে তীলে
হারাতে থাকল তার সম্ভাবনা।
কারণ অতিমাত্রায় বেশিসংখ্যাক ফুল মিলে স্বপ্ন দেখেছিল একটিমাত্র ফলের।
তারপর এক যে ছিল দেশ--কিন্তু ছিল না সেই সুখ।
এবং একদা সেই দেশটাই আর রইল না।
একটি গল্প আছে এক যে ছিল দেশের।
এখন একটি গল্প আছে এক যে ছিল সুখের।

আধুনিক জীবনের নির্যাস(এস.এম.জাকির হুসাইন)

এই পর্যন্ত মানব-জাতি দুটো অভ্যাস বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছে :
মানুষ সংক্ষিপ্ত আনন্দে তৃপ্ত হতে শিখেছে
এবং ব্যক্তিগত ঘরোয়া আনন্দকে উপভোগ করতে শিখেছে জনসমক্ষে।
প্রথম অভ্যাসটা রূপান্তরিত হয়েছে একটা মূল্যবোধে
ফলে কোরবানির আকাঙ্খার শক্তি গেছে দুর্বল হয়ে
এবং ক্ষীণ হয়ে গেছে ধৈর্যের পেশী।
এখন তাই নৈতিকতার নরম গদিতে বসে
মানুষ নৈতিকতাকে সংজ্ঞায়িত করতে চায় গাণিতিক ভাষায়
যা কোরবানি হয়ে যাচ্ছে পারষ্পরিকভাবে স্বীকৃত তুচ্ছতায়।
দ্বিতীয় অভ্যাসটি মানুষকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তাসহ
বের করে এনেছে খোলা মাঠে।
এখন তাই স্ত্রী তার স্বামীর সোহাগকে
বিকর্ষণ করে বিছানায়
এবং সুপারমার্কেট ও চলমান গাড়ির মধ্যে
আকর্ষণ করে তার চুম্বন।
মানুষ হয়ে গেছে একটা প্রাইভেট কার
সারাংশধর্মী আকাঙ্খা যার চালক
এবং এক পরিবার দুঃখ যার যাত্রীদল।
প্রভু আমার!আমি যেন সময়ের ধারণার মধ্যে আটকে না যাই--
বিশষত আমার আনন্দ ও দুঃখের অনুভবের ক্ষেত্রে।
তুমি যে আমার হৃদয়ে এই প্রজ্ঞা ঢেলে যাও যে
গাদা-গাদা চোখের সামনে আনন্দ অনুসন্ধান
সব দুঃখ-কষ্টকে ব্যক্তিগত করে দেবে মনের গভীরে।
আনন্দ,সুখ,এবং প্রশান্তির মধ্যকার পার্থক্যকে
আমি যেন সহজে বুঝতে পারি।
ব্যক্তিগত দুঃখ সামগ্রিক প্রশান্তিকে ধ্বংস করে--
এবং আনন্দের মুহূর্তে মুখটাকে কুত্‍সিতও দেখাতে পারে--
এই মহাসত্য যেন আমি ভুলে না যাই।

সোমবার, ৮ আগস্ট, ২০১১

সুখের গতিবেগ(এস.এম.জাকির হুসাইন)

আমার জন্মের পর থেকে
অনেক বদলে গেছে পৃথিবীটা
কিন্তু একথা নিশ্চিত সত্য যে
আমার মৃত্যুতে শুধু আজ নয় অনন্তকালেও
এক বিন্দু ক্ষতি হবে না পৃথিবীর।
গার্লফ্রেন্ডের সাথে সংক্ষেপে খেলা করতে করতে
এক চড়ুই পাখি আমাকে ব্যাক্তিগত ভঙ্গিতে বলেছিল :
অনেক আগেই সুখী হতে শেখা উচিত্‍ ছিল তোমার।
সময় যখন খারাপ হয় তখন চড়ুই পাখিও সত্য কথা বলে।
উচ্চ প্রযুক্তির জীবন আমাকে আজো শেখাতে পারেনি
উচ্চগতিসম্পন্ন সুখের কোনো রহস্য।
এক হোটেল বলনাচের কক্ষে অহিংস যৌনতায় সুখী হতে হতে--
কিছু লোক চেয়েছিল একটা বিখ্যাত উদাহরণ সৃষ্টি করতে--
এবং হারিয়ে ফেলেছিল আকাশ।
তারা তখনও সুখী হতে পারে যখন তারা ক্লান্ত।
তারা যখন সুখী হয় তখন তাদের অন্ধ হতে আপত্তি নেই।
জ্ঞানের ভাণ্ডারে কম পরলে--
আমার চোখ দিগন্তকে সাফ ক'রে ফেলে
মৃত্যুর খোঁজে।
মৃত্যুর ঘটনাটা কখনও দেরিতে ঘটে না।
হে প্রভু!আমাকে তুমি এমন মুহূর্তে মৃত্যু দাও
যখন চড়ুই পাখির কাছ থেকে আমার শেখা হয়েছে অনেক কিছুই
এবং নির্ধারিত তীরের মতো অত্যন্ত দ্রুত ছুটে যায় যে মুহূর্তগুলো
তখনও যেন আমি বেঁচে থাকি প্রজ্ঞার সাথে।

Facebook of this writer:http://www.facebook.com/smzhussains

পূর্ণাঙ্গ গ্রহণ(এস.এম.জাকির হুসাইন)

আমি তোমার দরবারে হাত পাতিনি,প্রভু
মাথা পেতেছি।
তুমি যা দেবে,নেব।
এবং যা-না দেবে,তাও নেব।
শুধু হাত পেতে এভাবে দু'তরফা নেয়া সম্ভব নয়।
আগে ভাবতাম কেবল দেয়ার মালিক তুমি।
কিন্তু এখন জানি না-দেয়ার মালিকও তুমি।
কারণ সম্পদ এবং দারিদ্র্য উভয়ের মালিক কেবল তুমিই।
না-দেয়ারও যে মালিক থাকে--
যারা কেবল হাত পেতে চায় তারা তা বুঝতে পারে না।
অবশ্য আমি যদি কখনও হাত পাতি
তোমার দরবারে--
তাহলে জেনে রাখ--মাত্র দুই হাতে আমার পোষায় না।
আমার রয়েছে লক্ষ-কোটি শূন্য হাত।
পাতলে সবগুলোই একসাথে পাতব।
তুমি আমার লক্ষ-কোটি হাতের দিকে তাকাও।
তোমার সদয় দৃষ্টিতে আমার হাতগুলো ভ'রে যাক।
একশ'টা হাত খুশি হলে--
পঞ্চাশটা মুখ তোমার প্রশংসাগীত গাবে।
হে প্রভু!আমি যখন চাই
তখন যেন একার জন্য না চাই।
এবং আমি যা পেয়েছি এবং পাব
তা যেন শুধু আমার নিজের জন্য না হয়।
এবং যা আমি চেয়েও পাব না
তা যেন আমি ভুলে যাই
কিংবা অপরকে দিয়ে দেবার জন্য চাই।

প্রার্থনা(সংগৃহীত)

(প্রভাতিক)
হে আল্লাহ্!
বুদ্ধি দাও,শান্তি দাও,অনুভূতি দাও,কল্পনা দাও।
সৃষ্টিপথের মর্মকোষের মধুপানের ক্ষমতা দাও।
জীবনকে আনন্দিত করো,সার্থক করো,উজ্জল করো।
উদ্যেগী করো,প্রাণবান করো, নিষ্ঠাবান করো।
অন্তরে নিয়ত শিখার মত জ্বলো--
বিবেক রূপে,বিচারবুদ্ধি রূপে।
আমার প্রার্থনা খাঁটি করো,খাঁটি করো,খাঁটি করো!
(সান্ধ্য)
হে আল্লাহ্!
জীবনকে পবিত্র করো,শান্ত করো,স্নিগ্ধ করো।
অবসাদ দূর করো,অবসাদ দূর করো,অবসাদ দূর করো।
ইতর লোভের নাগপাশ থেকে মুক্তি দাও।
পদ্দের মতো পঙ্কিলতার উর্দ্ধে ওঠার শক্তি দাও।
আনন্দ গ্রহণের ক্ষমতা দাও,আনন্দ দানের ক্ষমতা দাও।
ফুলের মত ফুটে ওঠার ক্ষমতা দাও।
আমার প্রার্থনা খাঁটি করো, খাঁটি করো,খাঁটি করো ।।

সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১১

PRAYER FOR DESTRUCTION(S M Zakir Hussain)



Before I commit the next major sin,
My Lord,
Kill me
With your own Right Hand.
Do not give me so much freedom
that can enable me to set my back to You.
And so before my next suicide,
My Lord,
Kill me with your own Right Hand.
Bind me, O Lord, with the rope
Of Your Grace
And let it not be long enough
So as to allow me to go too far away
From your Right Hand.
And make my feet too short
Ta able to speed away from you
At an accelerated pace.
And kill me if I love a journey too far away
If, however, You show enough kindness
To let me taste another major sin
My Lord,
Then never let me die
Until You`ve completely forgiven me.
Surely the taste of sin
Is not sweeter
Than the taste of your grace.
PRAYER FOR DESTRUCTION
Before I commit the next major sin,
My Lord,
Kill me
With your own Right Hand.
Do not give me so much freedom
that can enable me to set my back to You.
And so before my next suicide,
My Lord,
Kill me with your own Right Hand.
Bind me, O Lord, with the rope
Of Your Grace
And let it not be long enough
So as to allow me to go too far away
From your Right Hand.
And make my feet too short
Ta able to speed away from you
At an accelerated pace.
And kill me if I love a journey too far away
If, however, You show enough kindness
To let me taste another major sin
My Lord,
Then never let me die
Until You`ve completely forgiven me.
Surely the taste of sin
Is not sweeter
Than the taste of your grace.
From
Destructive Meditation
S M Zakir Hussain
(compose by kamal hossain)

মৃত্যুর বাজার মূল্য :: The Market Price of Death(এস.এম. জাকির হুসাইন)



মানুষকে দেবার মত
একটাই জিনিস আছে মানুষের কাছে- মৃত্যু।
যদিও মৃত্যুই একমাত্র জিনিস
যা কেউ নিতে চায় না
তবুও একথা গোপন সত্য যে
মৃত্যু ছাড়া মানুষকে দেবার মত
মানুষের কাছে কিছু নেই।
আর এ কারণেই-
বিজয়ী পরাজিতকে দেয় মৃত্যু
এবং পরাজিত দেয় শাহাদাত।
এক জাতি অন্য জাতিকে
এক গোত্র অন্য গোত্রকে
এক দল অন্য দলকে
এক দেশ অন্য দেশকে
এক ধর্ম অন্য ধর্মকে
কি দিচ্ছে- মৃত্যু ছাড়া?
মানুষ মৃত্যুর খেলায় মত্ত
কারণ মৃত্যুর সুরা পান ক’রে
অবিরত নেশাপ্লুত সে।
মানুষের তীব্র আকাঙ্খা
তার জন্য মৃত্যু বয়ে আনে।
মানুষের নিদারুন দারিদ্র
তার জন্য মৃত্যু বয়ে আনে।
মানুষের বড় বড় ভুল
তার জন্য মৃত্যুকে ডেকে আনে।
মানুষের তীব্র ক্রোধ
---কিংবা হিংসা
---কিংবা লোভ
---কিংবা অহংকার
তার কাছে ফিরে আসে মৃত্যু হয়ে।
মানুষ এ বিশাল পৃথিবীর বিস্তির্ণ ভূমিতে
মৃত্যুর আবাদ করছে শুধু।
মৃত্যু ছাড়া তার কিছুই দেবার নেই
পাবারও নেই।
হয় মৃত্যু মানুষকে খোজে
না হয় মানুষই মৃত্যুকে খোজে নেয়।
ভোগ মানুষকে মৃত্যু দেয়।
ভোগের মাধ্যমে প্রথম মৃত্যু হয়
ভোগের ইচ্ছার
এবং তা না হলে
মৃত্যু হয় ভোগের যোগ্যতার।
ভোগের বিনিময়ে মানুষ কুড়ায় ব্যাধি।
ব্যাধির পরিণতি নিশ্চিত মৃত্যু।
মানুষের অমোঘ নিয়তি এই যে
হয় সে মৃত্যু বিক্রি করবে
না হয় মৃত্যু কিনবে।
অন্য কোন ব্যবসা মানুষের পক্ষে
আদৌ সম্ভব নয়।
প্রেমের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে মৃত্যু জড়িত
প্রেমের মরা জলে না ডুবলেও
যে প্রেম করে সে মরবেই।
কারণ না মরতে পারলে
প্রেমই হয় না।
মানুষ সুখের মরণ চায়-
যদিও মরণের সুখ সব মরণে নেই।
প্রেমের ব্যর্থতার সাথে মৃত্যু
আবশ্যিকভাবে জড়িত।
আর এ কারণে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে
আত্মহত্যা করে কেউ কেউ।
নইলে অবশ্য প্রেমই তাকে হত্যা করত।
প্রেমের অযোগ্যতার ফলও মৃত্যু...
যে প্রেম করতে জানেনা
কেবল সে-ই প্রেমানুভুতির বিকৃতি দ্বারা তাড়িত হয়ে
ধর্ষণ করে-
এবং এভাবে মৃত্যু হয় সতিত্বের
এবং সততার
এবং পরিত্রতার
কিংবা ধর্ষণের পরও ধর্ষপ্রেমিক হত্যা করে ধর্ষিতাকে।
মৃত্যু হয়-
প্রেমিকের নয়-
প্রেমিকার নয়-
প্রেমের।
মৃত্যুর কবল থেকে রেহায় নেই।
কারণ মৃত্যুর কোনো বিকল্প নেই।
মানুষের ভাগ্য এমনই যে
মৃত্যুকে এড়াবার বাসনা তার সভাবজাত।
অথচ প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠার জন্য তার যা প্রয়োজন
তা রয়েছে
মৃত্যুরই মধ্যে।
অথচ ভুল হাতে মৃত্যু দিলে
সঠিক বিনিময় পাওয়া যায় না।
সঠিক উপায়ে মৃত্যু দিতে না পারলে ব্যর্থ হয় জীবন।
কাক- ডাকা ভোরে
চুপিসারে এ কাকই
বাসি হবার আগে
দিবসের প্রথম মৃত্যুকে
কুড়িয়ে নিতে না পারলে
এই জীবনে
সফলতার মালা গাঁথা সম্ভব নয়।
******************************
-অসুস্থতার আনন্দ-
The Pleasure of Illness
***** বাই এস.এম. জাকির হুসাইন।
(compose by kamal hossain)

আত্ম-প্রবঞ্চনা(জামান দিপু)

আমরা মাঝে মাঝে অনেক সূক্ষ্ম বিষয়ের অনুভূতিকে উপলব্দি না করিয়াই এমন ভাব ধরিয়া থাকি যেন আত্ম-উপলব্দি লাভ করিয়াছি।এই আত্ম-উপলব্দিকে আমি বলবো আত্ম-প্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছু না।আত্ম-প্রবঞ্চনা আত্মকে ধ্বংসই করে।

অসম বিপরীত সমীকরন(জামান দিপু)

উত্তর=দক্ষিণ

-
-
নারী=পুরুষ
-
-
বালক=বালিকা
-
-
সতীত্ব=?

মানুষের গান(খালিল জিবরান)

আমি এখানে ছিলাম সেই প্রারম্ভের মুহূর্ত থেকে
এবং এখানে আমি ছিলাম স্থির এবং
আমি এখানে থাকব পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত,
কারণ আমার মর্মবেদনার পীড়িত সত্ত্বার ভেতরে
সমাপ্তি বলে কিছু নেই।
আমি অসীম আকাশের যত্রতত্র ঘুরে বেড়াই
এবং আদর্শ পৃথিবীর অনেক উঁচুতে উড়তে পারি,
মহাকাশের ভেতর দিয়ে ভেসে বেড়াই,কিন্তু
এখানে আমি পরিমাপের কাছে বন্দি।
আমি কনফুসিয়াসের শিক্ষা সম্পর্কে শুনেছি,
মনোযোগ দিয়ে শুনেছি ব্রহ্মার বিচক্ষণতা,
আমি জ্ঞানের বৃক্ষতলে বুদ্ধের পাশে বসেছিলাম।
যদিও আমি এখানে বিরুদ্ধ বিশ্বাস ও অজ্ঞতার
সঙ্গে অস্তিত্ব রক্ষা করছি।
আমি সিনাইতে ছিলাম যখন জিহোভা মুসাকে
প্রস্তাব দিয়েছিল।
আমি জর্দানে দেখেছিলাম নাজারেতবাসীদের
অলৌকিকতা।
মোহাম্মদ(সা.)যখন মদিনা পরিদর্শন করেন
তখন আমি সেখানে ছিলাম
যদিও আমি এখানে বিভ্রান্তির বন্দি হয়ে আছি।
তারপর আমি প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছিলাম ব্যাবিলনের
পরাক্রমশালীদের।
জেনেছিলাম মিশরের মহিমা।
আমি জেনেছিলাম যুদ্ধকালে রোমের বিশিষ্ট ক্ষমতা
যদিও আমার প্রাথমিক শিক্ষা প্রদর্শন করেছিল
ওইসব সাফল্যের বেদনা ও দুর্বলতা।
আইন দৌড়-এর জাদুকরদের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম।
ওসিরীয় যাজকদের সঙ্গে আমি জড়িয়ে পড়েছিলাম বিতর্কে,
আমি প্যালেস্টাইনের নবীদের গভীর থেকে টুকরো টুকরো
তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম,
যদিও আমি এখনও পর্যন্ত অনুসন্ধান করছি সত্য।
আমি সম্পূর্ণ ভারত থেকে জড়ো করেছিলাম বিচক্ষণতা,
আমি অনুসন্ধান করেছিলাম আরবের মহত্‍ যুগের
যা শোনা যায় তার সবই আমি শুনেছিলাম,
যদিও,আমার হৃদয় অন্ধ ও বধির।
আমি কষ্ট পেয়েছি অপ্রকৃস্থ হামলাকারীদের দাসত্বের বন্ধনে,
আমি কষ্ট পেয়েছি নিপীড়নের মাধ্যমে আরোপিত ক্ষুধায়।
যদিও এখনও পর্যন্ত আমার কিছু অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা রয়েছে
যার সঙ্গে আমি সংগ্রাম করি প্রতিটি
দিনকে সম্ভাষণ জানাতে।
আমার মন পরিপূর্ণ কিন্তু আমার হৃদয় শূন্যতায় ভরে আছে,
আমার শরীর বৃদ্ধ কিন্তু আমার হৃদয় হচ্ছে নবজাতক।
সম্ভবত যৌবনে আমার হৃদয় বেড়ে উঠবে কিন্তু
আমি প্রার্থনা করি বৃদ্ধ হতে এবং পৌছে যেতে চাই
ঈশ্বরের কাছে আমার প্রত্যাবর্তনের মুহূর্তে।
শুধুমাত্র তখনই আমার হৃদয় পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।
এখানে আমি ছিলাম সেই প্রারম্ভের মুহূর্ত থেকে
এবং এখানে আমি ছিলাম স্থির এবং
আমি এখানে থাকব পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত,
কারণ আমার মর্মবেদনার পীড়িত সত্ত্বার ভেতরে
সমাপ্তি বলে কিছু নেই।

চিরস্থায়ী বৈশাখী শুভেচ্ছা(জামান দিপু)

নববর্ষ বলে পান্তা-ইঁলিশ খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই।চা-বিস্কুট খারাপ না।ইঁলিশ মাছে এলার্জি আর পান্তাভাতে খালের পানি ঐ রমনার বটমূলে।রমনার বটমূলে যেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই।বুড়িগঙ্গার পাড়ে যাওয়া যায়।সেখানে দেখুন কি কালো পানি।এবার ভাবুন কিভাবে এই পানি ফর্সা করা যায়।কিছু না করতে পারলেও অন্তত এক প্যাকেট ফেয়ার অ্যাণ্ড লাভলী পানিতে মেশাতে পারেন।তারপর ভাবুন "আহ্!দেশটার জন্য কিছু করলাম।"এভাবে একদিন আপনি হয়ে উঠবেন সেরা দেশপ্রেমিক,তখন দেশ-ই আপনাকে বলবে শুভ must হবে নববর্ষ।আর কতো লেকচার দিমু।নববর্ষ হোক শুভ।

তুমি আসবে বলে(গান)(নচিকেতা)

তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা,বৃষ্টি এখনো হয়নি।
তুমি আসবে বলেই কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো ঝড়ে যায়নি।
তুমি আসবে বলেই অন্ধকানাই বসে আছে গান গায়নি।
তুমি আসবে বলেই চৌরাস্তার পুলিশটা ঘুষ খায়নি।
তুমি আসবে বলেই জাকির হোসেন ভুল করে ফেলে তালে,
তুমি আসবে বলেই মূখ্যমন্ত্রী চুমু খেলো স্ত্রীর গালে।
তুমি আসবে বলেই সোনালী স্বপ্ন ভীড় করে আসে চোখে,
তুমি আসবে বলেই আগামী বলছে দেখতে আসবে তোকে।
তুমি আসবে বলেই আমার দ্বীধারা উত্তর খুঁজে পায়নি,
তুমি আসবে বলেই দেশটা এখনো গুজরাট হয়ে যায়নি।
তুমি আসবে বলেই সন্ত্রাসবাদ গুটিয়ে নিয়েছে থাবা,
তুমি আসবে বলেই জ্যোতিষ ছেড়েছে কতো না ভণ্ডবাবা।
তুমি আসবে বলেই পাড়ার মেয়েরা মুখ করে আছে ভার,
তুমি আসবে বলেই ঈষাণ কোনেতে জমেছে অন্ধকার।
তুমি আসবে বলেই বখাটে ছেলেটা শীশ্ দিতে দিতে দেয়নি,
তুমি আসবে বলেই আমার কলম এখনো বিক্রি হয়নি।

 সবার কাছে একটাই প্রশ্ন, তুমিটা কে?

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১১

যে উচ্চারণ শক্তি দেয়(এস.এম.জাকির হুসাইন))

হে প্রভু! হঠাত্‍--
আমি যেন হঠাত্‍ সঠিক ফাঁদে পা ফেলি
বুদ্ধিমানের মতো
এবং সফলতা আমাকে যেন
আঁকড়ে ধরে।
হে প্রভু! হে মৃত্যুর স্রষ্টা!
আমি যতদিন হাসিমুখে মরতে না শিখছি
ততদিন তুমি আমাকে মৃত্যু দিয়ো না।
হে প্রভু!তুমি আমাকে সেই প্রার্থনা শেখাও
যা তুমি কবুল ক'রে থাক!
হে আল্লাহ!আমি যা যা চাই
তার কিছুই তুমি যদি আমাকে দিতে না চাও
তাহলে তাই হোক।
তবে আমার যা যা আছে
আমি তার সবই তোমাকে দিয়ে দিলাম।
তুমি তা গ্রহণ কর।
হে আমার প্রতিপালক!
আমি তোমার কাছ থেকে যতটুকু নিতে পারি
তারও বেশি যেন তোমাকে দিতে পারি
এই যোগ্যতা তুমি আমাকে দান কর।
হে আলোর উত্‍স!
তুমি আমার চোখের মধ্যে
এমন আলো দান কর
যেন আমি কোথাও অন্ধকার না দেখি।
হে আমার এবং আমার পরিবারের স্রষ্টা!
তুমি আমাকে আমার পরিবারের জন্য
রহমতস্বরূপ ক'রে দাও।
হে আমার এবং আমার আত্মীয়-স্বজনদের স্রষ্টা!
তুমি আমাকে আমার আত্মীয়-স্বজনদের জন্য রহমত স্বরূপ ক'রে দাও।
হে আমার এবং আমার দেশবাসীর স্রষ্টা!
তুমি আমাকে আমার দেশবাসীর জন্য
রহমতস্বরূপ ক'রে দাও।
হে আমার এবং আমার পৃথিবীবাসীর স্রষ্টা!
তুমি আমাকে গোটা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীকুলের জন্য
রহমতস্বরূপ ক'রে দাও।
হে দৃশ্য-অদৃশ্য জগতের স্রষ্টা!
তুমি আমাকে গোটা বিশ্বজগতের জন্য
রহমতস্বরূপ ক'রে দাও।
হে পথপ্রদর্শক!
তুমি আমাকে আমার ওপর ছেড়ে দিয়ো না।
তুমি আমাকে তোমার আলোয় অন্ধ ক'রে দিয়ে
নিজেই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাও।
হে রহমানীর রহীম!পরম দয়াময়!
আমি তোমার দয়া চাই।
অথচ নিজে অন্যের প্রতি দয়া দেখাই না।
তাহলে আমি কিভাবে তোমার দয়া পাব?
সুতরাং তুমি আমাকে দয়ালু ক'রে দাও।
ইয়া কাহ্হার!হে কঠোর!
আমি যেন ভুলে না যাই যে
তুমি শাস্তিদানে কঠোর।
তাই তোমার মতো আমিও কঠোর হতে চাই।
যতক্ষণ তোমার কঠোরতার কথা
আমার মনে পড়ে
ততক্ষণ আমিও যেন কঠোর থাকি...
আমার নফ্সের প্রতি।
হে ওয়াদুদ্!হে বন্ধু!
আমি যখন অনেকের মধ্যে থাকি,
তখন তুমি আমাকে একা ক'রে দাও।
এবং আমি যখন একা থাকি
তখন যেন ভুলে না যাই যে
তুমি আমার সাথে আছ।
হে আল্লাহ!
আমি তোমাকে সর্বদা ভুলে থাকলেও
আমার কোনো আপত্তি নেই।
শুধু এটুকু যেন আমি কখনও
ভুলে না যাই যে--
আমার হৃদপিণ্ডের তসবিতে
ঘুমন্ত আবস্থায়ও তোমার নাম জপ চলছে।
হে মহাস্রষ্টা!সর্বদ্রষ্টা!
আমি তোমাকে দেখতে না পেলেও
একথা যেন কখনো ভুলে না যাই যে
তুমি আমার চোখের মধ্যে দিয়ে
তাকিয়ে আছ।
হে সর্বশ্রোতা!আমি তোমার কথা শুনতে না পেলেও
আমি যেন ভুলে না যাই যে
আমার কথা আর কেউ না শুনুক
অন্তত আমি নিজেই তা শুনছি।
এবং ফলে
তুমিও তা শুনছ।
হে প্রভু!
হে চিরজাগ্রত!
আমি যখন ঘুমাই
তখন এটুকু যেন স্মরণ যে
আমার হৃদপিণ্ডটা জেগে আছে।
এবং তার মধ্যে জেগে আছ তুমি--একা!
হে চিরপবিত্র!
আমি কাইকে লজ্জা না পেলেও
যেন নিজের কাছে নিজে লজ্জিত থাকি!
হে রাজাধিরাজ!
আমি যা কিছু পাই--
তা যেন অনেক সাধনা,অপেক্ষা,ও
কান্নাকাটির বিনিময়ে পাই:
যেন আমি স্পষ্টভাবে জানতে পারি যে
তোমার কাছ থেকে বিনীতভাবে ভিক্ষা নিচ্ছি।
এবং আমি যখন তোমাকে কিছু দিতে চাই
তখন যেন অঢেল দিতে পারি।
রাজাকে সামান্য দেয়া কি সম্ভব?
হে প্রেমিক!
আমি যেন তোমাকে নিঃশর্তভাবে
ভালবাসতে পারি--এক-তরফা ভালোবাসা।
প্রকৃত প্রেম তো এক তরফাই হয়,নয় কি?
হে আমার প্রেম!
তুমি আমাকে কথা দিয়েও
হঠাত্‍ ক'রে আমার কাছে এস না,
একটু দেরিতে এস।
যেন আমি তোমার জন্য
মধুর অপেক্ষার সুযোগটুকু পাই।
হে পরমবন্ধু!
পৃথিবীর সবাই যখন আমাকে
একাকী ফেলে চ'লে যাবে--
আমাকে আর একা ফেলে রাখতে
তোমার যেন মন না চায়।
পৃথিবীর সবাই আমাকে যতটুকু কষ্ট দিলে
আমার প্রতি তোমার দয়া উপচে পড়বে
আমার জন্য ততটুকু কষ্টের ব্যবস্থা ক'রে দাও।
হে বাণীর স্রষ্টা!
আমাকে এমন বাণী দান কর
যা ভাষা ছাড়াই অর্থবহ হবে।
হে সুখের উত্‍স!
আমাকে এমন সুখ দান কর
যা আমি বিনামূল্যে বিলাতে পারি।
হে তওবা গ্রহণকারী!
আমাকে এমন চেতনা দান কর যে
আমি যেন নতুন নতুন পাপ ছাড়াই
নতুন নতুন তওবা করতে পারি।
হে দুঃখের বিধাতা!
আমি যেন আনন্দের সময়ে
বোকা না হয়ে যাই।
হে রোগের স্রষ্টা!
আমার দেহের রোগ যেন
আমার মনের রোগকে নিরাময় ক'রে দেয়।
এবং আমার মন রোগগ্রস্ত হতে থাকলে যেন
দেহটা দুর্বল হয়ে যেতে থাকে,
যেন আমি অধিক পাপ না করতে পারি।

শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১১

বিশ্লেষণী ধ্যান ৩(এস.এম.জাকির হুসাইন)

আমার যদি কোনো আক্ষেপ না থাকে
তাহলে তার অর্থ এই হয়ে যাবে যে
আমি যা কিছু করেছি
তা সর্বদাই সঠিক হয়েছে।
আমার এই বিশ্বাস এই কথার প্রতি ইঙ্গিত করে যে
আমি ধ'রে নিয়েছি যে
আমার মধ্যে এর চেয়ে বেশি বিকাশ ঘটতে পারত না
এবং আমি আমার কর্মকাণ্ডে
আরো বেশি সঠিক ও বিশুদ্ধ হতে পারতাম না।
আমার যদি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে আক্ষেপ থাকে
তাহলে তার অর্থ এই হয়ে যাবে যে
আমি ইতিমধ্যেই যা ক'রে ফেলেছি
শুধুমাত্র সেটুকুই করতে পারতাম
এবং তার বেশি আমি কিছুই করতে পারতাম না
এবং ফলে আমার কাছে জীবন মানে হয়ে যেত শুধুই
একটি অতীত কাহিনী।
এবং তখন তার অর্থ হয়ে যেত
জীবনের পরিসমাপ্তি
এবং মৃত্যুর সূচনা,
যে সূচনা কখনই সমাপ্ত হয় না।
অতীতে রয়েছে শুধু
কিছু গল্প
এবং কল্পনা।
অতিমাত্রায় আক্ষেপ হলো
সেই কয়েদখানা
যা নির্মিত হয়েছে অতীত কালের কাহিনী দ্ধারা
এবং
আক্ষেপহীনতা হলো
নতুন উদ্যেগ এবং সম্ভাবনার মৃত্যুরই নামান্তর।
উভয় ক্ষেত্রেই
আক্ষেপ
যাবতীয় বিকাশকে
ব্যাহত ক'রে দেয়
যাবতীয় সম্ভাবনাকে
নস্যাত্‍ করে দেয়।
প্রথম ক্ষেত্রে
আক্ষেপ সৃজনশীল শক্তিকে নিঃশেষ ক'রে দেয়
যার ফলশ্রুতি হিসেবে প্রতিদিন
একই ধরনের দুঃখ উত্‍পাদিত হবে।
এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে
মন নিজেই যাবতীয় সৃজনশীলতাকে এবং সম্ভাবনাকে
উপেক্ষা ক'রে যায়
যেমনটি উপেক্ষা ক'রে যায়
যে কোনো মৃতদেহকে।
যুদ্ধে হেরে-যাওয়া জীবন্ত মানুষ।
সুতরাং
আমার আক্ষেপ রয়েছে যে
আমি ভুল কিছু কাজ ক'রে ফেলেছি।
এবং আমি এই আক্ষেপকে ভালোবাসি।
আর এভাবেই আমি একই সঙ্গে খুশি এবং
আক্ষেপপূর্ণ।
আমি খুশি যে আমি এমন কিছু করেছি যা ছিল ভুল।
আমি যদি ইতিমধ্যেই ভুলটি বা ভুলগুলো ক'রে না ফেলতাম
তাহলে আমার মধ্যে ভুল করার তৃষ্ণা
রয়েই যেত
এবং ফলে আমি আরো বড় ভুল ক'রে ফেলতাম
বোকামির মূহূর্তগুলোতে।
আমার যদি আক্ষেপ না থাকত
আমি ভুল কাজ থেকে সঠিক কাজকে চিহ্নিত করতে পারতাম না।
তখন আমি এক কাজই বারবার করতে থাকতাম
শত শত বার।
সুতরাং আমি একই সঙ্গে সুখী এবং আক্ষেপপূর্ণ।
আমি যা কিছু করি না কেন,
তা আমাকে প্রতিদিন আরো জ্ঞানী ক'রে দেয়
কারণ তা আমাকে জ্ঞানার্জনের সুযোগ দেয়
কারণ আমি ভুল ক'রে থাকি।
আমার কোনো কাজই বিফলে যায় না।
তা হলো এই কারণে যে
যা ঘটে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়
বরং যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো,
যা ঘটেছে তা নিয়ে আমি কি ভাবছি।
আক্ষেপ হলো সেই আগুন
যার মধ্যে আমি পুড়ছি
পুড়ছে আমার অজ্ঞতা
এবং দুরভিসন্ধি
এবং না-বোধক প্রবনতা
এবং ধীরুজতা এবং
আহম্মকগিরি।
এবং আমার বিবেক।
এবং আমি তার তাপ উপভোগ করি
এবং আলোটিকে ব্যবহার ক'রে
সত্যের দিকে দৃষ্টিপাত করি।
আমার যতক্ষণ একটি আক্ষেপপূর্ণ হৃদয় রয়েছে,
ততক্ষণ ভবিষ্যতকে আদর ক'রে আমার কোনো লাভ নেই,
কারণ আমার পক্ষ থেকে কাজটি ক'রে দিচ্ছে আক্ষেপ নিজেই।
আমার যদি কোনো আক্ষেপ না থাকত
তাহলে আমার অতীত এবং ভবিষ্যত
আমার জন্যে একই ভাবে অর্থহীন এবং গুরুত্বহীন হয়ে যেত,
আমি কোনোভাবেই বর্তমানকে উপভোগ করতে পারতাম না।
কেবল আমার আক্ষেপের সহযোগীতাতেই আমি
বর্তমানে একশত ভাগ কর্মঠতা অনুভব করতে পারি।
যা ভবিষ্যতেও সক্রিয় থাকবে,
যেহেতু তা অতীতেই শুরু হয়েছিল।
আমার আক্ষেপ হলো এমন শক্তি যা
আমার অতীত এবং বর্তমান এবং ভবিষ্যতকে
একটি সমতলে এনে দাঁড় করিয়েছে।
অন্যের সঙ্গে আমার সম্পর্ক কেমন হবে
তা আমি তখনই নির্ধারণ করতে পারব
যখন আমার মনে আক্ষেপের উদয় ঘটবে।
সুতরাং অধিকাংশ লোকের আক্ষেপ যেখানে
হতাশার কারণ হয়
এবং মনঃকষ্টের কারণ হয়
সেখানে আমার ক্ষেত্রে তা হতে যাচ্ছে ভিন্ন রকমের।
আমার আক্ষেপ আমাকে
জ্ঞান দান করে
প্রজ্ঞা দান করে
এবং দান করে এক ধরনের সচেতনতা এবং অঙ্গীকার-
গোটা মানবজাতির প্রতি।
আমার আক্ষেপ আমার পর্দা খুলে দেয়-
আমার কানের
আমার চোখের
এবং আমার অন্তঃকরণের।
তা আমাকে স্পষ্ট দৃষ্টি দান করে।
তা আমাকে মসৃণভাবে চিন্তা করার শক্তি
দান করে
এবং দান করে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্যতা।
আমার যদি আক্ষেপ না থাকত
তাহলে আমি আক্ষেপের অনুপস্থিতির জন্যে
আক্ষেপ করতাম।
কারণ তখন নতুন কিছু করার জন্যে আমার মধ্যে
কোনো স্পৃহা কাজ করত না।
কিন্তু আমি আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছি যা
আমি আমার অতীতকে বিচার করতে পারি
এবং নিজের ভবিষ্যত সম্পর্কে পরিকল্পনা করতে পারি
এবং নিজের বর্তমানকে উপভোগ করতে পারি।

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০১১

সাদাকা(মহাজাতক)

#মমতা জড়িত সেবার নামই সাদাকা।
#আগে সালাম দেয়া,কুশল জিজ্ঞেস করা,হাসিমুখে সুন্দর কথা বলা,অন্যের সাফল্যলাভে শুভকামনা জানানো সাদাকা।
#পরিবারের ভরণপোষণ,মা-বাবার খেদমত,স্ত্রী/স্বামী-সন্তানের সাথে সুন্দর ব্যবহার সাদাকা।
#আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের সাহায্য-সহযোগিতা,এতিম-মিসকিন,বিধবা ও অসহায়ের লালন পালন করা সাদাকা।
#রোগীর সেবা ও তার জন্যে দোয়া করা,তাকে দেখতে যাওয়া;মুমূর্ষকে রক্তদান করা সাদাকা।
#প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ত্রান কাজ,প্রকাশ্যে বা গোপনে অর্থ দান,তৃষিতকে পানি পান করানো,ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো সাদাকা।
#পথহারা মানুষকে পথ দেখানো।অন্ধ-শিশু-প্রবীণকে পথ চলতে ও অন্যান্য কাজে সহযোগিতা করা সাদাকা।
#পথ থেকে পথিকের জন্যে ক্ষতিকর প্রতিটি বস্তু(কাঁটা,ইট-পাথর,কাঁচের টুকরা ইত্যাদি)অপসারণ;পড়ে থাকা জলন্ত কিছুকে নেভানো সাদাকা।
#পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা,গাছ লাগানো সাদাকা।
#অধীনস্থদের সাথে মানবিক আচরণ করা সাদাকা।অন্ততপক্ষে নিজেরা যা খাবেন,তাদেরকেও তাই খাওয়ান।
#সমস্যা সমাধানে সত্‍ পরামর্শ দেয়া সাদাকা।ভালো কাজে উত্‍সাহিত করা এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হওয়া সাদাকা।
#অর্থনৈতিক বা সামাজিক পরিবেশের শিকার মজলুমকে সাহায্যে করা সাদাকা।
#ওজনে কম না দেয়া সাদাকা।
#অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকতা নিয়ে পালন করা সাদাকা।
#উত্‍সাহ-উদ্দীপক ভালো লেখা,গণসচেতনতামূলক চিঠি পত্রিকায় পাঠানো সাদাকা।
#যানবাহনে/অনুষ্ঠানে মহিলা প্রবীণ শিশু বা অসুস্থ কাউকে প্রয়োজনে নিজের আসনে বসতে দেয়া সাদাকা।
#অপ্রয়োজনে জ্বলতে থাকা বাতি ফ্যান এসি চুলা বন্ধ করাসহ যেকোনো অপচয় রোধে সচেষ্ট হওয়া সাদাকা।
#প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে অন্যের জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানো সাদাকা।
#জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অর্থ বা শ্রম দিয়ে কাউকে অক্ষরজ্ঞান দান করা,জীবনযাপনের বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া,সত্‍সঙ্গে একাত্ম করা সাদাকা।

QUANMTUM FOUNDATION :http://quantummethod.org.bd/

বীর যোদ্ধা(মহাজাতক)

একটি প্রতিযোগিতা যাতে ৪০ থেকে ৫০ কোটি প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছে।লক্ষ্য একটি বৃত্তের মাঝে পৌছা।সেখানে শুধু একজনের বেঁচে থাকার আশ্রয় রয়েছে।সেখানে যে পৌছাতে পারবে,সে-ই বেঁচে থাকবে।আর বাকি সবাই মারা যাবে।প্রতিনিয়ত রাসায়নিক অস্ত্র বর্ষিত হচ্ছে।লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগী মুহূর্তে মারা যাচ্ছে।কিন্তু একজন প্রতিযোগী সকল বিপদ অগ্রাহ্য করে সেই বৃত্তে প্রবেশ করল।আর সময়ের বিবর্তনে মানুষরূপে আবির্ভূত হলো এই পৃথিবীতে।মাতৃগর্ভে একটি ডিম্বানুর সাথে মিলিত হবার জন্য পিতার দেহ থেকে যে ৪০ থেকে ৫০ কোটি শুক্রাণু যাত্রা শুরু করেছিল,আপনি-আমি হচ্ছি সেই শুক্রানুর বিকশিত রূপ,যে ডিম্বানুর সাথে মিলিত হতে পেরেছিল।৪০/৫০ কোটির সাথে প্রতিযোগীতায় জয়ী হয়েই আমি/আপনি পৃথিবীতে আসতে পেরেছি।এই সাপেক্ষে আমরা একেকজন একেকটা বীর যোদ্ধা।

নবসুখ(খালিল জিবরান)

গেলোরাতে একটা নবতর সুখের সন্ধান পেলাম।প্রথমবারের মতো পরীক্ষা করতে যাবো,অমনি এক দেবদূত আর শয়তান দ্রুতবেগে আমার ঘরে প্রবেশ করলো।দরোজায় ওদের সঙ্গে আমার মুখোমুখি হতেই আমার নতুন আবিষ্কার নিয়ে ওরা বিবাদ শুরু করলো;একজন চিত্‍কার করে বললো,"ওটা একটা পাপ!"...আর অন্যজন বললো,"ওটাই পূণ্য!"

সেইসব মুখ(খালিল জিবরান)

মুখ আমি দেখেছি হাজারো প্রসন্নতায় ভরা,আবার অপ্রসন্ন মুখও দেখেছি,যেন ছাতাধরা । আমি মুখের আভা ভেদ করে দেখেছি কতোটা নোংরা-বিদ্ঘুটে লুকিয়ে আছে তার নিচে,আবার দীপ্তি দেখেছি কতোটা সৌন্দর্যমন্ডিত হতে পারে ওটা।আমি বুড়োমুখে দেখেছি যাতে বলতে গেলে কিছুই লেখা নেই,আবার মসৃন তরুণ মুখ দেখেছি যাতে প্রায় সবকিছুই অংকিত আছে।মুখ আমি চিনি,কেননা আমার চোখ-বোনা কাঠামোর মধ্য দিয়ে তাকিয়ে তার নিচে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতা আমি দেখি।

দুই পণ্ডিত ব্যক্তি(খালিল জিবরান)

প্রাচীন শহর আফকারে বাস করতেন দুই পণ্ডিত।তারা পরষ্পরকে ঘৃণা করতেন,আর একে অপরের জ্ঞানের মর্যাদাহানি করতেন।কেননা,একজন ছিলেন নাস্তিক,অপরজন আস্তিক।একবার জনাকীর্ণ স্থানে নিজ নিজ অনুসারীদের সম্মুখে দুই পণ্ডিত ঈশ্বরের অস্তিত্ব-অনস্তিত্ব নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু করলেন।দীর্ঘ বিতর্কের পর তারা প্রস্থান করলেন।সে সন্ধ্যায়,নাস্তিক জ্ঞানী গির্জায় গিয়ে বেদির সামনে নিজেকে সমর্পণ করে পূর্বের কৃতকর্মের জন্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থণা করলেন।একই সন্ধায়,আস্তিক জ্ঞানী তার সমস্ত পবিত্র পুস্তক পুড়ে ছাই করে দিলেন;কেননা ঈশ্বরের প্রতি তাঁর এতোদিনকার বিশ্বাস হারিয়েছেন।

দুই ঋষি(খালিল জিবরান)

জনশূন্য নির্জন এক পাহাড়ে দুই ঋষি(রিশি) বাস করতো।তারা ঈশ্বরের উপাসনা করতো,পারষ্পরিক ভালোবাসাও ছিলো অটুট।সম্বল বলতে তাদের ছিলো একটি মাত্র মাটির পাত্র।একবার বয়োজ্যেষ্ঠ ঋষির মধ্যে মন্দচিন্তার উদ্রেক হলো।সে তখন কনিষ্ঠকে বললো,"অনেক দিন হলো একসঙ্গে আছি আমরা।এবার বোধহয় আলাদা হওয়াই ভালো।আমাদের যা আছে চলো ভাগাভাগি করি।"কনিষ্ঠ তখন বললো,"আপনি আমায় ছেড়ে যাবেন ভাবতেই ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু যদি একান্তই তা করতে হয় তবে তাই হোক।"এই বলে মাটির পাত্রটি নিয়ে এসে বললো,"এটাতো ভাগ করা যাবে না,ওটা বরং আপনার কাছেই থাক।"জ্যেষ্ঠ তখন বললো,"না,আমি কারো দাক্ষিণ্য চাই না,যা কেবল আমার,আমি কেবল তাই নেবো।ভাগ করো এটা।"কনিষ্ঠ বললো,"ভেঙ্গে ফেললে এটা কারোই কোনো কাজে আসবে না।বরং আপনার কোনো উপকারে আসলেই তো ভালো।"জ্যেষ্ঠ আবার বললো,"আমি আমার নিজের জিনিস আর ন্যায় বিচারে বিশ্বাস করি,আর সেটা কোনোভাবে ভঙ্গ হোক এটা আমি চাই না।পাত্রটি অবশ্যই ভাগাভাগি করতে হবে।"আর কোনো যুক্তি দেখাতে অপারগ কনিষ্ঠ ঋষি তখন বললো,"এটাই যদি আপনার ইচ্ছা হয়,ঠিক আছে ভাগ করুন পাত্র।"জ্যেষ্ঠের মেজাজ ক্রমশই চড়া হচ্ছিল,এক পর্যায়ে চিত্‍কার করে বললো,"পাপিষ্ঠ কাপুরুষ,আমার সঙ্গে তর্ক করতে আসবি না।"

দেহ এবং আত্মা(খালিল জিবরান)

বসন্তকালে একজন পুরুষ এবং একজন স্ত্রীলোক খোলা জানালার পাশে বসেছিল।তারা খুব কাছাকাছি বসেছিল।স্ত্রীলোকটি বলল,তোমাকে ভালবাসি।তুমি সুন্দর,ধনী এবং সর্বদা ভালো পোশাকে থাকো। পুরুষটি বলল,তোমাকে ভালবাসি।তুমি সুন্দর কল্পনা।এতটা দূরে,হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায় না এবং আমার স্বপ্নের গান। কিন্তু স্ত্রীলোকটি রাগান্বিত হলো এবং বলল,জনাব,আমাকে এখন যেতে দাও।আমি কল্পনা নই এবং আমি তোমার স্বপ্নের কিছু নই।আমি একজন স্ত্রীলোক।আমি চাই তুমি আমাকে একজন স্ত্রী,অনাগত শিশুর জননীরূপে কামনা কর। তারা বিচ্ছিন্ন হল। পুরুষটি মনে মনে বলল,দেখ,আরেকটি স্বপ্ন এখনই কুয়াশা হয়ে গেল। এবং স্ত্রীলোকটি বলছিল,যাক্,যে পুরুষ আমাকে কুয়াশা আর স্বপ্নে রূপান্তর করে,তার সঙ্গে কি?

প্রেমের সঙ্গীত (খালিল জিবরান)

একদা এক কবি একটি সুন্দর প্রেমের সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।তিনি সঙ্গীতটির বেশকিছু কপি তৈরি করে বন্ধুবান্ধব,পরিচিত পুরুষ ও মহিলা,এমনকি পর্বতে বাস করে এক তরুণী,যার সঙ্গে মাত্র একবার তার দেখা হয়েছিল তাকে পর্যন্ত বিলি করলেন।
দু'একদিনের মধ্যে এক পত্রবাহক সেই তরুণীর কাছ থেকে এক পত্র নিয়ে এল।পত্রে সে লিখেছে,আমাকে তুমি নিশ্চয়তা দাও।তুমি যে আমার জন্য প্রেমের গানটি লিখেছ,তা আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।এখনই আস এবং আমার মা-বাবাকে দেখ।আমরা বিয়ের আয়োজন করব।
কবি পত্রের উত্তর লিখে জানান,বন্ধু,এটা কবির হৃদয় থেকে উত্‍সারিত একটি প্রেমের সঙ্গীত।এটা সকল পুরুষ ও নারীর জন্য।
তরুণী প্রতিউত্তরে জানাল,স্বার্থপর এবং মিথ্যুক!শুধু তোমার কারণে আজ থেকে মৃত্যুদিন পর্যন্ত আমি সকল কবিকে ঘৃণা করব।

বিপরীত বাসনারা(রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ)

একদিন নারী প্রেম ডেকেছে আমাকে,আমি খুব সাড়াহীন নিঃশব্দে ছিলাম আমি যাইনি।
বন্ধ দরোজায় করাঘাত করেছিলে তুমি প্রেম আমি দোর খুলিনি-আমি যাইনি।
উন্মুল বাসনা বিদ্ধ রক্তাক্ত যৌবন আমাকেও ডেকেছিল অভিসারে আমি যাইনি।
নদীদের রোমন্থনে ভাষা আছে ঢেউয়ের মুকুটে জীবনের প্রতিবিম্ব এ কথাও বলেছিলে একদিন-
তবু আমি যাইনি নদীর কাছে, সাগর আমাকে ডেকেছিলো আমি যাইনি।
সৌন্দর্য আমাকে ডেকেছিল প্রাচুর্য আমাকে ডেকেছিলো আমি যাইনি-
তুমি আমাকে ডাকোনি কখনো আমি শুধু তোমারই কাছে যাবো।

অস্তিত্বহীন দাস(এস.এম.জাকির হুসাইন)

দাসের পক্ষে মনিবকে ভালোবাসা বড় কঠিন।
দাসের ২৪টা ঘন্টার মালিকানা মনিবের
এবং তার গোলগাল ঘড়ির
৩৬০-ডিগ্রী স্বাধীনতার সবটুকু।
সুতরাং,হে মনিব,
আমার অক্ষমতা ক্ষমা কর।
আমি যদি তোমার সাময়িক দাস হতাম--
আধা -কেনা এবং আধা-মুক্ত--
এবং আধা বেতনভুক্ত এবং আধা পেটে-ভাতে,
তাহলে তোমাকে ভালোবাসার জন্য
আমার কিছুটা অবসর সময় থাকত।
তুমি তো জান--অপরকে দেবার মতো কোনোকিছুই থাকার কথা নয় পরাধীন কোনো হৃদয়ের।
সুতরাং,হে মনিব,আমি শুধু তোমাকে এই সত্যটাই স্মরণ করিয়ে দিতে পারি যে--
আমার হৃদয়ের মালিক আমি নই।
প্রভু গো!আমাকে সেই সুযোগ্য দাস হবার যোগ্যতা দাও
যে কামনা করে যে সমস্ত ক্ষমতা থাক তার মনিবের হাতেই।

খেতে বসার দোয়া(এস.এম.জাকির হুসাইন)

বহুদিন ধ'রে আমারা খিদে পাচ্ছে
যথানিয়মে--রুটিন অনুযায়ী
অথচ চিরকাল আমি খেতে বসেছি এমনভাবে যেন জীবনেও খাবারের মুখ চোখে দেখিনি আমি।
ক্ষুধা আসে পেটের মাপে
অথচ আমি খাবার মাপি চোখ দিয়ে ক্ষুধা আসে একই উত্তাপে
অথচ আমি খাবার চাই বিচিত্র স্বাদের।
ক্ষুধা চিরকালই তার স্বভাবের ঐক্যকে রক্ষা করে এবং এভাবে সম্মান করে তাওহীদের পবিত্রতাকে--
অথচ আমি থেতে বসি পাকস্থলী এবং জিহবার দাস হয়ে।
সুতরাং আমি খাবার দিয়ে ক্ষুধাকে মাপব
আজ আমি লাগামহীন আকাঙ্ক্ষা দিয়ে খাবারকে মাপব না ক্ষুধার ফর্মুলা গোটা জীব জগতেই অভিন্ন।
তাহলে কেন খাবারের ফর্মুলা হবে অনিয়মিত?
নিজের ক্ষুধা নিয়ে গবেষণা করার জন্য কাউকেই অক্সফোর্ড হারভার্ডের গবেষক হবার প্রয়োজন হয় না।
বরং আমি আজ এমন এক অভিনব সত্যকে আবিষ্কার করতে চাই যা জানেনি অধিকাংশ বড় বিজ্ঞানীও।
ক্ষুধার স্রষ্টা আমাকে তৃপ্তির জ্ঞান দান করুন।
আমার সামনে তকতকে খাবার আমি ঘ্রাণ পাচ্ছি।
ঠিক এই মুহূর্তে অনেক মানব ও প্রাণী তাদের ক্ষুধাকেই চিবিয়ে হজম করার চেষ্টা করছে।
প্রথম গ্রাস গালে পুরার আগেই তাদের কথা আমার ভাবা উচিত্‍।
ঠিক এই মুহূর্তে সাময়িক এবং দীর্ঘস্থায়ী অনাহারে যারা আছে তাদের অনেকে বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা
যুবক এবং যুবতী
নারী এবং শিশু
অনেকের থালা শুকিয়ে গেছে
অনেকের কোনো থালাই নেই
তাদের সম্মানে আমি এক গ্রাস কম খাব।
আমার পূর্বপুরুষদের অনেককে অনেক সময়ে থাকতে হয়েছে নিদারুণ দারিদ্র্যে ও অনাহারে।
তাদের সম্মানে আমি একগ্রাস কম খাব।
আমার পুর্বপুরুষদের অনেকে ভোগ-লালসার আধিক্যে ডুবে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করেছে তাদের অনাচারের ফল হিসেবে আমি বংশানুক্রমিকভাবে পেয়েছি ব্যাধি তেমনি সামাজিক প্রতিপত্তি ও অর্থবিত্তও।
এই খাবার খাওয়ার ব্যাপারে
জিহবা কে অনুমতি দেবার আগে মনের সাথে আমার কিছু চুক্তি আছে:
আমি এ থেকে যে তৃপ্তি পাব তার বিনিময়ে যেন তাদেরকে ক্ষমা করি যারা আমার মনে কষ্ট দিয়েছে।তার কারণে আমি ভুলে যাব আমার বিগত জীবনের আফসোস।
আমি এ থেকে যে শক্তি পাব তা দিয়ে পরিবার সমাজ ধর্মের প্রতি আমার কর্তব্য পালন করব।
প্রতি এক গ্রাস আহারের বিনিময়ে আমি একটা ক'রে বদ অভ্যাস ত্যাগ করব।
এবং একটা ক'রে ভালো কাজের সংকল্প করব।
এই আহার দিয়ে গর্বিত হবে যে দেহ আমি তার মালিকানা দাবি করব না।
এক গ্রাস আহারকে আমি মনে করব এক গ্রাস তৃপ্তি
এবং তার বিনিময়ে আমি সাধ্যমতো আর এক গ্রাসের ক্ষুধা মেটাবার জন্য প্রতিজ্ঞা করব।
সুতরাং বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।আমি এখন খেতে শুরু করব।

আমার প্রিয় লোভ(এস.এম.জাকির হুসাইন)

সম্ভবত আমি গোটা মহাবিশ্বের
শ্রেষ্ঠতম লোভী।
এবং আমি আমার লোভকে ভালবাসি
যেমন ভালবাসি জীবনকে।
লোভ ছাড়া অর্থহীন এ জীবন।
গুরু বলেছিলেন--মনের মধ্যে চিন্তাকে নাড়িয়ো না।
তাঁর আদেশে থেমে গিয়েছিল মনের স্বয়ংক্রিয় চিন্তা।
তখন আমি আমার আকাঙ্খাকে ছেড়ে দিলাম।
গুরু আদেশ করলেন--
একটা আকাঙ্খা যেন না জাগে মনে।এবং যেহেতু আমি ভালোবাসতাম আমার গুরুকে মনের চেয়েও বেশী--
আমি তত্‍ক্ষনাত্‍ মনের মধ্যে জাগিয়ে তুলে সহস্রাধিক আকাঙ্খা
শূন্যে দিলাম ছেড়ে।
আকাঙ্খাগুলো প্রবল হলো বাতাসের চেয়ে।
আমার দৃষ্টির রঙে আকাশ গেল ছেয়ে ভরপুর আমার লালসায়।
আমি আমার প্রভুকে বললাম--
সবকিছু চাই আমি--
গোটা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ!
জবাব এল নিরবতার।
'সমগ্র মানব এবং জীবজগত্‍ শুধু আমার।'
একটা পাখিও আমার বিরুদ্ধে গায়নি।
এবং জবাব এল আকাশ থেকে--
আমারই দাবির আকাশী প্রতিধ্বনি।
গোটা পৃথিবীর মালিকানা পেয়ে
আমি একক কণ্ঠে ঘোষণা করলাম--
"এবং আমি আমার সমস্ত সম্পদ আজ বিতরণ ক'রে দিলাম
মানুষ এবং গোটা জীবজগতের কাছে।কারণ আমি আমার পরিবারকে ভালবাসি,আমার পৃথিবীতে যারা বসবাস করে আমার সংসারে।একটা ক্ষুদ্র প্রাণীও আমার হৃদয় থেকে পালাতে পারবে না।"
আমার ঘোষণার প্রতি বিরোধিতা করার মতো ছিল না কেউ।
পরম দয়াময় আমার লালসাকে সমর্থন দিলেন।
হে প্রভু!আমি যদি জীবনে কখনও কিছু পাওয়ার জন্য কামনাপূর্ণ হই তাহলে আমার মধ্যে যেন কামনা জাগে গোটা মহাবিশ্বকে পাবার
ঠিক যেমন কোনো একটি পরিবারের যে-কোনো একজন সদস্য গোটা পরিবারটিকেই পায়।

আত্মরক্ষার মন্ত্র(এস.এম.জাকির হুসাইন)

কচ্ছপ ভালোভাবেই জানে কিভাবে লুকাতে হয়--ভেতরে!
ভয় পেলে ঘুমিয়ে পড়া ভালো--
তাতে ভয়ের চেতনারা হৃদয়ের ঘরে হানা দেবে না।
মানুষ তখনই ভয় পায়--
যখন সে জানে যে সে ভয় পেয়েছে।
কিন্তু সে যদি জানতে পারে যে সে আছে ঘুমিয়ে তাহলে তার ভয় যাবে চ'লে।
কারণ স্বপ্নকে কেউ ততক্ষণ ভয় পায় না যতক্ষণ সে জানে যে সে স্বপ্ন দেখছে।
কিন্তু হায়,নরকের কিনার ঘেষে হামাগুড়ি দেবার সময়ে এ কথা না জানা অসম্ভব যে আমি সজাগ আছি।
মানুষ যা ভালোবাসে না--
তা তাকে জাগিয়ে তোলে।
এবং সে যা পছন্দ করে গোপন আগ্রহে--তা তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয় বিষাক্ত মন্ত্রের মতো।
দুঃখের মুখোমুখি জেগে থাকার কষ্ট দুঃখীকে কেন জ্ঞানী ক'রে তোলে না?
সুখের মুহূর্তের মাধুকরী ঘুম
কেন মানুষকে ভীত করে না দুঃস্বপ্নের হানা দিয়ে?
আর তাই আমি গোটা মহাবিশ্বকে বিক্রি ক'রে দিতে চাই--
তাদের কাছে--যারা এর মালিক।
ফলত লেনদেনের ঝামেলা থেকে আমি মুক্ত।
প্রভু গো,আমাকে দুর্বল ক'রে দাও বাইরে--এবং ভেতরে আমাকে তুমি যথেষ্ট পরিমাণে সাহসী ক'রে তোল।

জাগরণের আগে নিদ্রিতের দুঃখ(এস.এম.জাকির হুসাইন)

স্বপ্ন শেষ-এবার ওঠো জেগে-
মুয়াজ্জিন আজান ফুঁকতেই
ডান হাতে গুটিয়ে ফেললাম বিছানা এবং ওজু ক'রে
নামাজের মধ্যে এসে দাঁড়ালাম।
কিন্তু হায়!অতীতগামী স্বপ্ন খুঁজতে খুঁজতে
হারিয়ে গেল সমুখের নামাজ।
স্বপ্ন থেকে বের হতে না পারলে
কিভাবে জেগে উঠব আমি?

ন্যয়বিচার চাই না আমি(এস.এম.জাকির হুসাইন)

তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার আগে-প্রভু-
নিজেকে দাঁড় করিয়েছিলাম বিবেকের কাঠগড়ায়:
আমি আজীবন কতটুকু ভালোকাজ করেছি
তা আমার জানার কথা নয়
যেহেতু কাকে বলে ভালো তা আমার
ভালো ক'রে জানা নেই
কিন্তু কতটুকু খারাপ কাজ করেছি-
তা আমার না-জানার কথা নয়
কারণ কোনো ভালোই ভালো নয়
যদি না তার উদ্দেশ্য হয় পবিত্র।
এবং আমার উদ্দেশ্যকে সবচেয়ে ভালো জেনেছি আমি
এবং আমি ন্যয়বিচার পছন্দ করি ব'লে
ক্ষমা করতে পারিনি নিজেকে।
আর এভাবে বিচার শেষে
অভিযুক্ত আমি।
আমার আদালতে।
আইনের ফাঁক গ'লে বেড়িয়ে যাব
এমন সুযোগও আর নেই-
সত্যের দাবিতে আজ বিচারক থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিচার
তোমার অপেক্ষায়।
তোমার দয়ার সুযোগ নিয়ে বেরিয়ে যাব আমি
আমারই কারাগার থেকে
এই আশায় আপীল করলাম-হে দয়াময়-
তোমার আদালতে।
আমার বিচারে আজ অভিযুক্ত আমি
একমাত্র তোমার দয়াই আমার শেষ ভরসা।
আমাকে ক্ষমা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়
সে অধিকার রয়েছে কেবল তোমারই
হে মহাবিচারক।

প্রথম প্রেমের শেষ দিকে...(এস.এম.জাকির হুসাইন)

প্রেমের কথা আংশিক জেনেছেন কবিগণ
কারণ তারা তা বলতে বলতে গানের সুরে কেঁদে ওঠেন।
প্রেম যখন মঞ্চে ওঠে
তখন তা দর্শককে কাঁদায়
সুতরাং কবি কোনো প্রেমিক নন
তিনি প্রেমের ট্রাজেডির দর্শকমাত্র।
প্রেমের প্রথম নাম বিরহ
বিরহ মানে আগুন
আগুনকে ইন্ধন না দিলে তা ঠিকমতো জ্বলে না
সুতরাং গনগনে আগুন সৃষ্টি
করার জন্য নিকটস্থ বৃক্ষ থেকে সংগ্রহ করতে হয় কাঠ
এবং যতক্ষণ তা না শুকাচ্ছে
ন্যূনতম ধোঁয়ার প্রতিশ্রুতিতে
ততক্ষণ তা মেলে রাখতে হবে নগ্ন রোদে
এক প্রেমে বহুবার কাঁদার মতো উত্তপ্ত চোখ
সবার থাকে না
কারণ এক বিরহ ঋতুতে ঋতুতে ঘোরে ফেরে
ভিন্ন ভিন্ন আয়তনের নিঃশ্বাস
তার জলবায়ুর নিদর্শন
কেউ প্রেমরোগে আক্রান্ত হলে
ডাক্তার ঘন ঘন তার ওজন পরীক্ষা করেন
সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য ওজন খোয়াতে না পারলে
রেজিস্টার্ড ডাক্তার কখনও প্রেমের রোগীকে
তার রোগের জন্য সার্টিফিকেট দেন না।
সময়কে যে ভালবেসেছে
কিভাবে সে অপেক্ষা শিখবে?
আর অপেক্ষা করতে যে শেখেনি
সে কিভাবে ত্যাগ করবে সময়ের মায়া?
এবং সময়ের মায়া ত্যাগ করতে না পারলে
দূরের দিকে তাকিয়ে থাকা কিভাবে সম্ভব?
দূরকে ভালোবাসা মানেই বিরহ
এবং বিরহ হলো প্রেমের ব্যক্তিগত নাম।
প্রেমের প্রথম নিদর্শন হলো এই যে
তা হয় স্রেফ একতরফা
একেবারে নিজের দায়িত্বে চোখ বন্ধ রেখে
প্রেম করা অত্যন্ত জরুরি
অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করার জন্য
কথা দিয়েছিল যে
তার জন্য আগে থেকে অপেক্ষায় থাকা;
যে বলেছে যে সে আগামীকাল আসবে
তার জন্য গত পরশু দিন থেকে
অপেক্ষায় থাকার নাম একতরফা বিরহ।
দুদিক থেকে বিরহ হলে তার নাম
প্রেম হয় না
তার নাম হয় সাজানো নাটক
যার রচয়িতা আগে থেকেই জানেন
অবশেষে ঘটনাটা কোথায় গড়াবে।
সুতরাং আমি একাই ভালোবাসি
আমার ভালোবাসা আমাকে আরো একা ক'রে দিক
এবং আমার একাকিত্বই হোক আমার
ভালোবাসার পুরুস্কার।
অবশেষে হারিয়ে যাক এই একাকিত্ব
শূন্যতার মাঝে।
সব হারিয়ে নিঃস্ব হতে না পারলে
প্রেম ক'রে কি লাভ?
সবচেয়ে বড় লাভই হলো
সবকিছু হারানো।

বিশ্লেষণী ধ্যান(এস.এম.জাকির হুসাইন)

হে আল্লাহ্! সর্বশক্তিমান! পরম দয়ালু!
আমার প্রার্থনা শোন।
তুমিতো সর্বশ্রেষ্ঠ ধ্বংসকারী।
তুমি অনেক জাতিকে ধ্বংস করেছ;
অনেক মানবগোষ্ঠিকে;
অনেক শহর,নীহারিকাপুন্ঞ্জ,গ্রহ-উপগ্রহ,কৃষ্টি-কালচার,বিশ্বাস-অবিশ্বাস-অনেক কিছু।
কিছু লোক রয়েছে যাদেরকে তুমি আকষ্মিকভাবে পাকড়াও ক'রে থাক,যখন তারা নরকের দিকে হাঁটতে হাঁটতে যেতে থাকে।
তাহলে তুমি কেন চোখের পলকে আমাকে পাকড়াও করছ না।
হে প্রভু,আমার প্রার্থনা শ্রবন কর:
ধ্বংস কর....
ঠিক এখনই....
নিষ্ঠুরভাবে....
এবং চিরস্থায়ীভাবে....
ধ্বংস কর....
আমার ক্রোধকে।
ধ্বংস কর....
.....আমার হতাশাকে।
ধ্বংস কর....
....আমার দূর্বলতাকে।
হে দয়াময় ধ্বংসকারী!
আমার ওপর দয়া কর এবং
ধ্বংস কর....
....আমার অজ্ঞতাকে
....আমার অলসতাকে
....আমার হতাশাকে
....আমার ভুলভ্রান্তিকে
....আমার অকৃতজ্ঞতাকে
....আমার নৈরাশ্যকে।
হে প্রভু!
ধ্বংস করো-সেকেন্ডের মধ্যেই-....আমার লোভকে
....আমার কাপুরুষতাকে
....আমার বোকামিকে
....আমার নিষ্ঠুরতাকে
....আমার ক্ষীণদৃষ্টিকে এবং
....দারিদ্র্যকে:
সব ধরনের-
- অর্থনৈতিক মানসিক আধ্যাতিক।
হে প্রভু!তুমি যদি ধ্বংস না কর আমার মধ্যে যা কিছু খারাপ রয়েছে তা
তাহলে আমি তো ভালো থেকে আরো ভালোর দিকে যেতে পারব না;
আমার মধ্যে যা কিছু ভালো রয়েছে তাকে লালন করতে পারব না।
তুমি যদি ধ্বংস না কর আমার মধ্যে যা কিছু ভালো রয়েছে তা তাহলে আমি তো
ভালো থেকে আরো ভালোর দিকে এগিয়ে যেতে পারব না।
তুমি যদি ধ্বংস না কর আমার অযোগ্যতাকে তাহলে তো আমার যোগ্যতা পূর্ণাঙ্গ হবে না।
তুমি যদি ধ্বংস না কর আমার সাময়িক যোগ্যতাকে তাহলে আমি কিভাবে তোমার ওপর নির্ভর করতে শিখব?
হে আমার শ্রেষ্ঠতম বন্ধু!
আমি যখন ঘুমাই আমি যাবতীয় দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাই
এবং বিশ্রাম নিতে চাই।
কিন্তু আমি কি চাই যে
আমার হৃত্‍পিন্ডটাও তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব ভুলে যাক এবং বিশ্রাম নিক?
নিশ্চয়ই আমি তা চাই না।
সুতরাং,আমাকে ধ্বংস করার যোগ্যতা দান কর জীবনের ধ্বংসকারী জিনিসগুলোকে এবং আমার হৃদয়কে দূষণমুক্ত রাখার যোগ্যতা আমাকে দাও।
চারদিকেই ধ্বংস ভ'রে যাক-আমার হৃদয়ের জগত্‍ জুড়ে-
এবং আমি যেন হঠাত্‍ ধরা পড়ে যাই
-হঠাত্‍-
সফলতার ফাঁদে
এবং বিপুল ধ্বনাত্মক শক্তিবলয়ের মধ্যে।
উপরের দিকে যেতে যেতে যেতে যেতে যেতে শুধুই চলুক ধ্বংসের ঘনঘটা।

প্রকৃত ধনীর চিন্তা পদ্ধতি(এস.এম.জাকির হুসাইন)

ক্ষুধার্ত মুখ দেখলে আমার ভালো লাগে। কারণ আমি একটা ক্ষুধার্তকে ভালোবাসার সুযোগ পাবো। নিঃস্ব মানুষ দেখলে আমি পুলকিত হই। কারণ আমার চোখের সামনে একজনের জীবন বদলে যাবে। অপরের পেটের ক্ষুধা আমার দয়ার চেয়ে বড় নয়। জগতের যাবতীয় নিঃস্ব যেন আমার উত্তরাধিকারী হতে পারে -- হে প্রভু!আমাকে এমন সম্পদশালী ক'রে দাও। ভরা হাতে মানবজাতির সামনে দাঁড়িয়ে আমি যেন খালি হাতে ফিরে যেতে পারি ওজনহীন নিঃস্বের মতো। আমাকে তুমি এ কথা প্রমাণ করার যোগ্যতা দাএ যে-- প্রেমের সাথে পাল্রা দিয়ে দারিদ্র্য কখনও জয়ী হতে পারে না।

প্রশংসা(এস.এম.জাকির হুসাইন)

ঊষার নির্মল আলোয় মুখ ধুয়ে
সবুজ বাতাসের সাথে পরিচ্ছন্ন নিঃশ্বাস নিতে নিতে
অকপটে তোমার প্রশংসা করেছিলাম ,প্রভু।
অনিবার্য সন্ধ্যার ঘনায়মান আঁধারের প্রান্তে ব'সে
এখন কিভাবে তোমার নিন্দা করব.মালিক-
শুধু এ কারণে যে.মুখে একটু ছায়া পরেছে?

দিনের শুরুতে .এবং শেষে
এবং মাঝামাঝি সময়ের প্রতিটি বিন্দুতে
চিন্তায় .চেতনায়
জ্ঞানে এবং অজ্ঞতায়
অনুভূতিতে এবং আড়ষ্টতায়
সমস্ত প্রশংসা কেবল তোমারই জন্য।
শুধু তোমার প্রশংসার জন্যই আমাকে সৃষ্টি করেছিলে তুমি
এই যেন হয় আমার
জীবনের চূড়ান্ত প্রতীতী।

সেবা(এস.এম.জাকির হুসাইন)

পৃথিবীটা বিপন্ন আজ:
সুপুষ্ট নখর এবং থাবা-
বেড়ে উঠেছে কৌশলের সাথে।
এখন হাসির সাথে দেখা যায় অত্যধিক দাঁত
এবং বাণীর সাথে লেগে থাকে ভীষণ আঠালো এক জিভ।
আগ্রহী চোখের সাথে রয়ে গেছে তীর -
এবং পৃথিবীর কিছু চিণ্হিত বাগান
মনোরম লক্ষ্যবস্তু বটে!
আর তাই পৃথিবীটা-যদিও নিরব-
অত্যুজ্জ্বল দিবালোকেও আমাকে কাঁদায়।
তার বুকের ওপর অসমবন্টিত ক্ষত দেখে
বুঝতে পারি আমি কত ভয়ংকর হয়েছি শৈশব থেকে।
হে প্রভু!আমার কবল থেকে আজ পৃথিবীটাকে বাঁচাও:
আমি ছাড়া তার অনিষ্ট করার জন্য কে বা আছে আর?

আমরা জনগণ(জামান দিপু)

ওই যে ওই পাড়ায় ভদ্ররা বাস করে।আর ওইযে জোরে কথা শুনা যায় ওই পাড়ায় অভদ্ররা বাস করে।আমরার এইখানে সাধারণের বাস।ওই দুই পাড়া মিল্লা ঝগড়া করে আর আমরারে মারে!

ক্ষেপনাস্ত্রের শেষ ইচ্ছা(জামান দিপু)

বিপন্ন এই পৃথিবীর একদেশের ক্ষেপনাস্ত্র আরেক দেশের ক্ষেপনাস্ত্রের বন্ধু হতে চায় নিজেদের বিলুপ্ত করে।পারে না।তারা বলে যুদ্ধ নয় শান্তি চাই,শান্তি রক্ষায় প্রয়োজনে কঠিন যুদ্ধ করতেও আমরা প্রস্তুত।মানে নিজেদের হত্যা করতেও প্রস্তুত।

স্বপ্ন সংক্রান্ত কাব্য বোধহয়(জামান দিপু)

১.(বহ্ণি)"স্বপ্নে জলসায়,বহ্ণি ঝলসায়"। ২.(স্বপ্নফসল)"স্বপ্নে তুমি আমি মেতে উঠি,পৃথিবীকে ফসলে ভরে দেবো বলে।কখনো জীবন্ত ফসলের আশায়।কখনো ফসলহীন চিন্তা মাথায় রেখেই করি চাষাবাদ।শেষতক থাকে শুধুই দীর্ঘশ্বাস।" ৩.(পরিবর্তিত জলবায়ু )"চৈত্রের এই ঘনকুয়াশায়,তুমি-আমি দিন কাটাই ,একই কম্বলের তলায় শুধু একটু উষ্ণতার আশায়।" ৪.(গোঁলাপ)"প্রতিদিন দেখি দুইটি গোঁলাপ।একটি তাহার স্থির,আরেকটি করে ছুটোছুটি আর আমাকেই করে অস্থির"

অপচয়কে না বলি(জামান দিপু)

একটু দেখুনতো আপনার বাসায় কিংবা কর্মস্থলে গ্যাস,বিদ্যুত্‍,পানি কিংবা আপনার চিন্তাশক্তির অপচয় হচ্ছে কিনা।যদি হয়ে থাকে দয়া করে সুইচগুলো অফ করে দিন।ধন্যবাদ

রসালোচনা(জামান দিপু)

১.ডাক্তার সাহেব আমারে আমার জ্বর ফিরায়া দেন আপনে আপনার এন্টিবায়োটিক ফিরায়া নেন।(এন্টিবায়োটিক এর জাতাকলে পিষ্ট এক রোগী)
২.বলত্‍কারও হইলাম আবার টাকাও দিলাম(সদ্য pregnant হওয়া গাভীর আকুতি)
৩.অপরিকল্পিত মোরগ-মুরগীর পরিবার গড়ে বড় বড় খামার।
৪.পেটে পীড়া থাকলে যখন খাবার পাকস্থলীতে পৌছায় তখন পাকস্থলী খাবারকে বলে,"পরে আসতে পারছ না দেখছ না roads & highway এর কাজ চলতাছে।"
৫.বুকটা হুহু করিয়া উঠিল তাহাকে স্পর্শ করিবার পর মনে হইল আমি পাইলাম তাহাকে পাইলাম।(গতকাল ৫০০ টাকার নোটটি হারাইয়া গিয়াছিল তাকে)
৬(1).আমাদের একটাই দাবি লিপস্টিকে কোনো প্রকার ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মেশানো যাবে না।(প্রেমিক সংগঠন)
(¡¡)স্ত্রী:ওগো হঠাত্‍ তোমার পেটখারাপ হলো কেনোগো?
স্বামী:তোমারেনা কইছি কুদ্দুছের দোকানের লিপস্টিক না দিতে!
৭.সমাজে আমারও একটা weight আছে ৫৮ কেজি।
৮.পেটে খাবার নাই তাতে কি ভাব কোনোদিনও কমবো না।
৯.actuly আমি totaly বাংলা কথা বলতে পারি না।
১০.ইতিহাস সাক্ষি দেয়, আমি ছোটোবেলায় আলিফলায়লা দেখতাম।পাশাপাশি ম্যকগাইবারও।না দেখতে পেলে কান্না করতাম আর আম্মুকে বলতাম"আম্মু আমার ম্যকগাইবার আইনা দাও ই ই ঈ!"
১১.(¡)গোলাপ হইতেও কেরোসিনের গন্ধ অতি উত্তম!(try urself)

(¡¡)গোলাপের গন্ধে মাথা ধরে,কেরোসিনের গন্ধ বাতের ব্যাথা উপশম করে।(মসিউর ভাই বলছে)
১২.বই পড়া ভালো না,এটা জানতে হলে আপনাকে প্রচুর বই পড়তে হবে।
১৩.আর কত দৌড়ামি?এইতো আর একটু দেখবা প্রেম উপচাইয়া পড়বো।(মোরগ-মুরগীর কথোপকথন)
১৪.তুমি নর হইলে আমি তোমার বর!(ছন্দবাদী কবি)
১৫.femelder ফেয়ার অ্যাণ্ড লাভলী বেশীরভাগই পুরুষ ব্যবহার করে।(মুদী দোকানদার)
১৬.যেই এলাকার পানি যত কালো ও দুর্গন্ধময় সেই এলাকার ভূমির মূল্য তত বেশী।(বাংলাদেশের ভূমির মূল মূল্যতত্ত্ব)
১৭.হুম! সার্টিফিকেট এনেছেন?
জ্বি স্যার তবে ফটোকপি।attested করা আছে।
হুম! ভালো এ এ এ ডাঃকদম আলী সরদার(এম.বি.বি.এস)
(এফ.সি.পি.এস) ভালো বেশ ভালো।তো ডাক্তার আপনার পরিচিত?
জ্বি স্যার।
তো ডাক্তার সাহেবের কি কোনো private chamber আছে নাকি?
জ্বি স্যার নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটের ভিতর।
ওইখানে কেন?
স্যার মানে উনি ওইখানে ফ্লাক্সো,সিল ছপ্পরের দোকানদারি করেন।
১৮.আর বইলেন আপা বাচ্চাটা দিন দিন মোটা হইয়া যাইতেছে,কি করমু শুধু খাই খাই করে দুপুরের খাবার সকালেই খাইয়া ফেলে,রাতেরটা দুপুরে আর সকালের খাবার রাতেই খাইয়া শেষ।আপনার বাচ্চার কি হইছে মনে হয় দেশে দূর্ভিক্ষ দেখা দিছে।
কি কমু আপা খাবারতো খেতেই চায় না।এই ধরেন সকালের খাবার সেই দুপুরে,দুপুরেরটা সে--ই রাতে আর রাতের খাবার সকালে।আপনি ই বলেন¡(স্কুলের সামনে বসে থাকা বাচ্চাদের মায়েরা এভাবে সময়কে গুরুত্বপূর্ণ করিয়া তোলেন)
১৯.একই উত্‍স হতে আসা ৫০ কোটি dna যদি একই সময়ে ৫০ কোটি ডিম্বানুতে প্রতিস্থাপন করা যায় তবে কি ঘটবে?(নেন science দিয়া দিলাম এবার বসে বসে fiction করেন আর লেখেন।)

মাঝে মাঝে আজ আমি(জামান দিপু)

আজ আমি আমি নই,আজ আমি অন্য কেউ।
সারাদিন ছিলাম মগ্ন,বিশ্রী এক চিন্তা নগ্ন।
পৃথিবীকে করতে নাশ,আমার ভিতর আজ শয়তানের বাস।
মাঝে মাঝে আমি এমন হই,আমি যেন আমি নই।
আমি যেন অন্য কেউ!

তথাকথিত আধুনিক নারী(জামান দিপু)

নারী তুমি কেনো এত উতলা হও?
কেনো নিজেকে মেলে বিপরীতকে কষ্ট দাও?
কেনো বিপরীতের মনে অযাচিত বাসনা জাগাও?
ইভটিজিং করতে বাধ্য করে বিপরীতকে জেলে পাঠাও।
তুমিতো ভোগ্যবস্তু নও!

তবে পণ্যের মতো কেনো নিজেকে সাজাও।
একটু সাবধান হও
মিছেমিছি কেনো নিজেকে ঠকাও।

বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১১

love,sex&marriage




Love, Sex, and Marriage
By S.M. Zakir Hussain (Bangladesh)




Love, Sex, and Marriage
   
                                                - By S. M. Zakir Hussain (Bangladesh)
 
Introduction:

What is love? Now-a-days, as always perhaps, boys are often heard saying to girls “I love you.” At that girls feel utterly confused about the meaning of the word ‘love’. No doubt that they feel elated and thrilled by the words “I love you,” but that is because these words at best convey a PROPOSAL and not necessarily some TRUTH hidden inside. It confuses a girl the most when she hears the words “ I love you” from a boy who has seen her for the first time. No acquaintance, no commitment, still there is the utterance “I love you.” The girl who has experienced cheating from so-called boy friends or received such proposals a number of times, doubts whether the utterance is the expression of a real FEELING or a superficial INTENTION.

Therefore we are going to investigate the issue with an unbiased attitude. If love is what is usually meant by the cliché “I love you,” then why does the reality take a U-turn after marriage or even after some illegal dating? Does the word “love” have any special meaning or significance in the male-female nexus? Is the love of a mother for her child different from the love of a wife for her husband? We must look into the matter from a fresh angle of view.
 
What is NOT Love?
The definition of love is not love. So it is no use attempting to define love in any language. Rather, we can try to identify events that represent moments of love. And the best way of doing so would be to say which events do NOT represent love.
 
Suppose I see a beautiful girl. She is so beautiful that I feel spell-bound and find it hard to manage myself without wanting to possess her. Is that love?
 
Surely that is a LIKING - A CHOICE, A FASCINATION - but not necessarily love. I do not say that choosing something or somebody is good or bad. What I am insisting on is that a choice is an IDENTIFICATION based on some PURPOSE and hence involves personal gain. Therefore it is not necessarily love.
 
Is love an instinctive urge to GET something? For example, a boy may like any girl as far as his physical desire is considered. Is that love?
 
Love is universal. Let us assume that it is. Likewise, LUST or physical desire for sex is also universal. Does this similarity, then, mean that love and the desire for sex are the same thing? Let us not look for an answer first. Just let us try to perceive the urgency of the question.
 
ANY man may feel sexual desire for ANY girl – whether he is prepared to satisfy his desire in that way is a different thing, and there is no doubt that such a desire is universal. Now, can we say only on the basis of this attraction that any man loves any girl or woman? 
 
Any man may want to HAVE SEX with any girl or woman, but will any man want to MARRY any girl or woman? As far as sex desire is considered, the desire seems to be universal but such desire narrows down too much when the question of the desire for marriage crops up. If having sex is the only intention, then nobody seems to choose or limit the alternatives, but if marriage is the intention, then there is a lot of consideration and limiting of choices.
 
Because both love and lust seem to be universal, a girl will hardly believe that a boy loves her only because he has told her so a number of times. That is why a girl likes to hear the words “I love you” again and again. She needs to.
 
I need my wife to satisfy my thirst for sex. Is that love? Definitely not. Am I to blame for having the desire to be with her to satisfy that purpose, then? No, I am not. Actually, it is not that a ‘should’ or ‘not should’ needs to be associated with sex in this connection. We simply say that sex does not necessarily mean love.

On the other hand, love, though a universal feeling, or attitude, has to be reduced to some specific RELATIONAL ATTITUDES if it has to be related to man-woman relationship. That is why I am free to LOVE another person’s wife because I must love a FRIEND or a SISTER, but I cannot claim any sexual relationship with her. Because love unifies, it may tend to unify me and any woman on the PHYSICAL AS WELL AS MENTAL LEVEL, but if I claim to have true love for her, I cannot have sexual relationship with her until I have married her with her own consent in the proper way. This means that love entitles a man and a woman to be physically united only when it has been translated into self-compensating bilateral RELATIONSHIPS.

Let us try to go deeper into the nature of the problem. Unless we can clearly distinguish love from sex urge, we may not understand the fact at all. Those who are loving have loved – simply loved all the time – but that has not helped us to intellectually understand the nature of love as distinct from the nature of any other one-pointed desire.
 
I like a girl - or some girls - so much that I am prepared to sacrifice anything for them. Is that love? In a sense, yes. That is love because my mind is concentrated on something and is prepared to SACRIFICE something else for that. So, that is love. But, however, that is love of my OWN DESIRES, not of the girl or girls.
 
Here I think we have got a starting point. Love is the desire to be united, when the desire gets concentrated so much that it tends to break all barriers. Sacrifice is the means of breaking such barriers.
 
Now let us try to get familiar with the definition by using it to explain some selected phenomena. Suppose I see a bird in a shop and like it very much. I get it by sacrificing some money. That is my liking for the bird - my choice, my fascination. But is that my love for the bird? Probably not. Certainly that is my love for myself, of my bird-loving desire. My choice of or liking for something is surely my love for my own choices. So that is also love, but not love for that thing. It is only love for myself. And so it is selfishness.
 
If, on the other hand, I purchased the bird by sacrificing an amount of money and then felt that it would feel better in the open sky rather than in the cage and let it free, then I could be said to have loved it. When there is love for something or somebody, there is SACRIFICE of self-interest or personal desires or choices. But again, we must move carefully.
 
A mother – in fact any mother – loves her son, as we think so. The son asks her for some money, and being a mother, she gives it to him. The son spends this money on gambling and thus wastes his time rather than studying and going to school. The mother knows about it. She forbids her son to gamble but at the same time cannot help but give him the money whenever he asks for it. Her mother heart is too soft to say no to her son. Is that love on the part of the mother for the son?
 
The mother does not feel good if she does not have the opportunity to satisfy the demands of her son. She is caught in the mechanical tendency of instinct. That is love, no doubt, but NOT LOVE FOR THE SON; rather, it is only love for HER OWN INSTINCT. The mother in this case is caught in her conditioning as a mother. But love is freedom, so it cannot arise out of a conditioning. 
 
Love in Emotions:

If I do not love you, and on the contrary I love myself, I happen to hate you or envy you; so hatred or envy is a form of love.

If I love wealth too much, then I am greedy. So greed is love for wealth.

In this way we can see that every mental attitude is love transformed or distorted in some way. So we have discovered a very precious truth: There is nothing except love. And it is for this reason that there is reason to doubt when somebody says, “I love you”. There is love even in the statement itself, but it is very difficult to know WHO IT IS FOR.

So love is not the main point; rather what should be the most important issue is what the TARGET of one’s love is. Is the individual identifying their love with the correct person or thing or idea?

So we see that in the assertion “I love you” there is love, not necessarily for the “you” but for the “I” that is uttering the sentence. But is that the love we want to mean when we speak out the sentence? Most of the time we only love OURSELVES. And that is why what we call love may seem to be so to ourselves but not to others.

Thus it is evident that men generally love women because of the natural instinct, which does not guarantee that there is personal care for somebody in such love. And hence a woman has reasons to doubt if a man says that he loves her. She finds it difficult to feel how he loves her as a particular person. Unless she has the conviction that he loves her AS A SPECIAL PERSON as against all others, she feels the love is of not much use to her. But can somebody be loved specially without building a special relationship with him or her?
 
Now we have discovered another very important point: LOVE AS A UNIVERSAL PHENOMENON is one thing and LOVE AS A WAY OF BUILDING PERSONAL RELATIONSHIPS is another. For the time being we will confine our focus to the relationship between a man and a woman, which includes physical relationship too.
 
If a man likes any specific aspect of a woman’s beauty or characteristic, the woman feels compensated for. Such choice on the part of the man gives her gratification. Suppose I like the eyes of my wife very specially. My liking is enough for her as a reward. She feels grateful to me simply because I like her eyes. But she clearly feels that that liking of mine may not be my love for her; rather, it may be, and actually is, a feeling of mine resulting from the fact that her eyes are a possession of mine for which I should be prepared to sacrifice something – maybe a word of praise if not anything else – if I say that I love her. If she feels that she has beautiful eyes, then she has reasons to feel and to have the confidence that anybody will like those eyes and praise them. So my liking in this case cannot go by the name of love. If she feels that she has something valuable and even if I pay her for that, she will not feel that that attitude of mine to her possession or uniqueness is love. On the contrary, the situation may turn out in the opposite direction. She may feel that I am not giving her the right price and hence she is suffering an opportunity cost.
 
My wife is beautiful or loyal to me. That is why I consider her a precious gift for me. Does it mean that I love her? Maybe I think I love her. But how can I say that I love her if she does not feel so? Even if she feels that I love her, what is the proof that I love her?

Love and liking are not the same thing. Everybody values what he or she likes. That establishes a give-and-take relationship, which is bound to collapse when there is nothing to give or take or there is no person with the ability to take. Then that will mark the end of the relationship. Love never ends, only relationships do. However, if the relationships are founded on love, they do not collapse. Then what is love?
 
We are in a catch. And we cannot possibly get out of it if we do not know the relationship between LIKING and LOVE. Either we must trace the origin of liking in love or see why liking and choices exist. Also, we need to see how pleasure is related to liking in one’s life.
 
Love for the Specific and the General:
Liking refers to the instinctive urge to CLASSIFY and CHOOSE. Thus it refers to the compulsive drive to GET. Whereas love refers to the inner urge to GIVE someone HIS or HER DUE. Actually, as far as love is concerned, there is no ‘someone’, rather, there are the all. If I ‘love’ my own son too much by giving him everything he wants, then a time will soon come when he will blame me for my having given him the opportunity to go astray. Love does not mean just giving something to somebody; it means giving somebody his or her due. It is in this sense that if I love only one person in the world, I have already loved all others. Giving somebody his or her due ensures giving others their dues as well.
 
Loving means helping to grow up. It means giving as much as taking. If a child stays away from its mother and does not let her have the opportunity to give it care and affection, then the mother will feel deprived and will think that the child does not love her. Love means giving opportunities to give as well. Giving includes taking.

Love is nature, but because it works through instinct, it may happen to be a biased state of the mind, too personalized and self-centered.
 
Suppose my wife loves me. She says, and wants me to believe and feel, that she loves me very much. So she always wants me to stay with her, enclosed within the four walls, cut off from my parents and brothers and sisters and other relatives. She takes care of me more than my mother did or would. She gives me everything that a man could ever expect from a woman. Now, can I say that she loves me? Can I? In recent times many women are seen to ‘love’ their husbands in this way. They are thirsty for a very small, nuclear family, with all passions revolving around their petty desires and likings and disliking. Is that love?
 
Let us see. Please do not conclude hastily. From her own point of view, what she is giving is really love. But then we must also admit that that is her OWN WAY of imparting love. Love as a psychological phenomenon is neither to blame nor to be praised. That is because it is always there in everybody’s heart. So what matters is HOW one wants it expressed. If the way my wife takes care of me is to be called love, then she does not love ME. I have my parents whom I must love my own way or whom I must give an opportunity to love me in their own way. Likewise, I have my relatives. I have relationships with all of them. My personality is the sum of all such relationships. If she claims that she loves me, then we must judge that love by the manner in which she values my relationships with others. If she does not include my TOTAL personality, she does not love ME. She only loves her OWN CONCEPT of me, her OWN DREAM and EXPECTATION of me.
 
Or let us take another issue. Suppose I have 10,000 Dollars. I love my wife so much that I have decided to give her all the money. And that I do. She feels happy for the time being. She feels valued, acknowledged, cherished, and elated. She kisses me on the forehead one hundred times a day. She is doing what she is expected to. But from my part, can I assume that I have loved her the way that will make her really happy?
 
We must examine the consequences before rushing to any conclusion. After a few days she finds that I have loved her in all the ways possible. She feels important. But my parents and relatives had also some rights to the 10,000 dollars that I have given her. Because I have already given all to her, they are deprived. Now they envy her. They consider her alien. They posses a negative attitude toward her as much as I have possessed a positive attitude toward her. So they give her as much hatred as I have loved her. Now she receives condemnation and indifference from them. My love for her is nullified by their hatred toward her. Now she has only the money and a husband whose relatives do not like her. Thus, by giving her whatever I had, I have failed to give her a good environment, a society, recognition, a friendly background. Now she is only an abstract picture on a wrong background. Have I really loved her? After all, LOVING SOMEBODY INVOLVES PUTTING HIM OR HER IN THE RIGHT PERSPECTIVE. So love does not mean giving something. It means sacrifice. And sacrifice is more than giving.
 
Love and Sex:
Now let us move into the discussion of love in relation to sex. For the time being suppose that we are not aware of marriage, which may be a way of building relationship to validate or justify sex. And in this case also we are going to have recourse to examples and analysis to explore the issue. Suppose a girl says that she loves me and likes me. I also like her. She does not have any physical relationship with any other man. She is sort of devoted to me. I am pleased by her exclusive passion for me and also grow a strong fascination for her. She wants to have physical relationship with me and so I want to marry her. Surprisingly, SHE DOES NOT WANT TO MARRY ME. NOR DOES SHE WANT TO HAVE CHILDREN. What she wants is just to have physical relationship, nothing more. She wants to have PLEASURE. She wants to enjoy my body, reputation, and personality. Can I say that she loves me? Suppose that she is even prepared to forgo the pleasure of building relationships with others. And so she is undergoing suffering for me in a sense. Now, can I call it love?
 
Dear reader. Please do not rush to any conclusion first. It is true that she need not be bound to agree to my request of having children. She is not even bound to marry me. So I may not blame her only because she does not comply with some of my requests or opinions or values. Rather, I should feel proud of myself because she feels attracted to me. However, does she love me?
 
Please do listen. My urge for sex has a PROMISE in it. It is a commitment to mankind. It is through my sex urge that whatever is latent in me is going to be expressed. I also must contribute something to mankind. My ethnic traits, my personality, my genetic makeup, my experience, aptitude, knowledge, values, etc. want to get expressed and prorogated through my offspring. Even when I am old and about to die, I need to rest assured that I am not going to end forever, that I also have created some waves that will keep moving on the huge sea of creation even when I am no more. Mankind owes from me something that I may not hide or keep hidden. Through my pleasures something constructive should come out. MY PLEASURES SHOULD NOT GO IN VAIN. They must be creative. Therefore I need to have children. I cannot remain buried in the grave of the past when I am dead; rather, my children should carry me along into the distant future and as long as my progeny has something to contribute to the world, I will not be extinct. In that sense IT IS MY RESPONSIBILITY TO MAKE MY ENJOYMENT MEANINGFUL. I must have children.

But she wants me to enjoy and grow tried and old. She wants me to waste my energy in the guise of enjoyment and then sit helpless. She does not have any COMMITMENT to my family, to my existence, to my blood stream. She does not want to see me creative. Nor does she herself want to create something valuable. So, I admit that she loves my body, my personality or social face, my wealth etc., but does she love ME? She only loves me in the PAST and not in the FUTURE. She does not want to love me when I am no more. She does not consider me VALUABLE. She does not consider me a complete, continuous personality. She only wants to buy me as a commodity. Therefore I am not going to have sex with her. I cannot have sex with a girl who is not even aware of the possibility that lies in my sex urge. I cannot have sex with a girl who does not even pay attention to the good news that the pleasure in the blood brings.

I am not saying that I need to plan having children every time I have sex. Rather, what I am going to say is that sex is not an instrument of mere bodily pleasure; it is a promise, a commitment to create, a gateway to creativity. I do not have the right to enjoy the pleasure of something alone depriving mankind of its real promise. Having sex is a way of serving the entire mankind. That is why it is apparently gratifying and gives pleasure. And do I have the right to enjoy the fruit of a tree without doing something to keep the tree alive? A girl who does not feel that I am the entire MANKIND does not deserve my sex.
 
So we see that sex is an activity that connects the past, present, and future of a person. It keeps the past alive through progeny in the future and gratifies the present with pleasure. That is why it should be considered a responsibility, not an instrument of pleasure. The sex which is only for pleasure, therefore, is not love. We love sex but that does not mean that sex is love. However, if sex is taken as a responsibility and promising possession, then sex and love have no difference.
 
Obviously, sex for pleasure cannot be the basis of relationship. That is why marriage is more than sex for pleasure. If marriage is to be linked with sex exclusively, then it must be said that it is sex for love, which has a commitment to the PAST, PRESENT, and the FUTURE as a whole. It involves COMMITMENT and SACRIFICE. Because sex for love is to help make future generation possible, sex in marriage must be exclusively selective. Both the spouses must be so committed to one another that neither of them can have extra-marital sex and thus dissipate his/her real worth. They got united to save the value preserved in them. And undoubtedly this is one kind of sacrifice, a great sacrifice. In fact, commitment always involves sacrifice.
 
Now we can conclude that there is true love in a happy marriage, and nowhere else. All else is fascination or infatuation, devoid of any commitment. Love as a psychological state is always there in each of our activities. We may love fishing, gambling, killing, helping, earning, learning and so forth. Love may be universal but love in any of these forms does not unify all. Any man may like to have sex with any woman and vice versa, but that is not love. Sex for pleasure only unifies two bodies for a few seconds, not even the minds. Because sex urge is universal like love, love and sex have happened to be confused through the reference of pleasure. If sex gave us bitter experience instead of pleasure, I hardly think anybody but a few would call it love.

There is actually nothing except love, no escape from love. Every liking or disliking is a form of love, maybe distorted. Therefore, love is not the point that is important as far as man-woman relationship is considered – it is simply always there in the heart – rather, what counts is how we want it expressed, and how we want it to establish relationships among us.
 
My fascination for girls or women is my liking, not love. If we must call it love, then we must also qualify the word ‘love’ with another word and say that it is ‘physical love’. But such a term, which is coined only to satisfy short-term goals, should be avoided.  Liking or choice drives us toward action. It is not to be branded as right or wrong as long as it is natural and lawful.

When I like something I do not look at myself; rather, I look at my own liking. I do not even feel the need to look at myself because I feel I have the “myself” as given and beyond modification. But when I really like and choose something in light of my own past, present, and future, from which mankind is not excluded, then only my liking and choice become love. While likes, dislikes, or choices are one-shot approaches of desires, love is a continuous discovery of the self. Therefore, as far as male-female relationship is concerned, there is love in marriage. Marriage is love. There can be no love in adultery.
 
 
When Sex Means Love:
So there is a way of getting immense pleasure from sex. Just imagine for a second that you are no more in the world but still the world exists with all its grandeur. From somewhere – we do not know where – you look at the world and see that your children and grandchildren and great grandchildren… are representing you in the world. Some of them still value your values and some of them do not. They constitute a great part of mankind and so you are not meaningless, uprooted, and unimportant. If you let your imagination drift five hundred years ahead, you will see that a majority of the community of a certain region belongs to your family. Maybe some of them are scattered around the globe, perhaps in the sky too. Because all of them are not like you, rather some or many of them are of diverse qualities, they not only represent your personality and genetic makeup, but they really represent the entire mankind too. So even if you are not alive physically, you exist through them with all your promise, commitment, and possibility.

Now descend from the pinnacle of your imagination. Stand in front of your wife (or wives). Look at her into the eyes. Just feel that it is through her warm participation that you are going to multiply yourself through the unknown future. So she is very close to your heart. Her name is forever written on the history of your family tree. She is the gateway through which you are going to make the adventurous journey to the unknown future. She is part of what you are in the continuous plane of existence of life on earth. What you consider your children or progeny will get expressed through them.

So, see how personally you should take her! How close you should get to her! How much you should care for her! How important she is to you! Why should she be outside or away from you? And why should you be away from her? You both should be inside each other. Then give her a big hug. Love begins here. This is love.

Even if you are old and so is your wife, try this technique between yourselves. The entire past will seem meaningful to you. So there can be no wastage of life or time or passions. True love repairs all anomalies. And if this article does you any good, then pray for the poor author.
 
[From the author’s book “Love, Sex, and Marriage”, translated by the author.]