শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০১১

কাজের ছেলে (যোগিন্দ্রনাথ সরকার )

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।
পথে হেঁটে চলি, মনে মনে বলি, পাছে হয় ভুল;
ভুল যদি হয়, মা তবে নিশ্চয়, ছিঁড়ে দেবে চুল।

দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
দু’টা পাকা বেল, সরিষার তেল, ডিমভরা কৈ।

বাহবা বাহবা – ভোলা ভুতো হাবা খেলিছে তো বেশ!
দেখিব খেলাতে, কে হারে কে জেতে, কেনা হলে শেষ।
দাদখানি চাল, মুসুরির ডাল, চিনি-পাতা দৈ,
ডিম-ভরা বেল, দু’টা পাকা তেল, সরিষার কৈ।

ওই তো ওখানে ঘুরি ধরে টানে, ঘোষদের ননী;
আমি যদি পাই, তা হলে উড়াই আকাশে এখনি!
দাদখানি তেল, ডিম-ভরা বেল, দুটা পাকা দৈ,
সরিষার চাল, চিনি-পাতা ডাল, মুসুরির কৈ!

এসেছি দোকানে-কিনি এই খানে, যত কিছু পাই;
মা যাহা বলেছে, ঠিক মনে আছে, তাতে ভুল নাই!
দাদখানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দুটা পাকা ডাল, ডিম ভরা দৈ।

সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১১

কোরবানি(এস. এম. জাকির হুসাইন)

কোরবানি হলো জীবনের একটি আবশ্যিক অঙ্গ।এটি হলো ধর্মবোধেরও একটি আবশ্যিক স্তম্ভ।এমন কোনো জীবন নেই যাকে কোনো না কোনো জিনিষ কোরবানি করতে হয় না।কোরবানির হাত থেকে কোনো রেহাই নেই।হয় আপনি মিথ্যাকে কোরবানি দিয়ে সত্যের দিকে ধাবিত হবেন,না হয় আপনি সত্যকে কোরবানি দিয়ে মিথ্যার দিকে ধাবিত হবেন।কোরবানি ছাড়া কোনো বিনিময় প্রাপ্তি সম্ভব নয়।আমি যদি পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করতে চাই,তাহলে আমাকে অনেক আনন্দ ফূর্তি খেলাধুলা ইত্যাদিকে কোরবানি করতে হবে এবং কেবল তখনই আমি আমার লক্ষ্য হাসিল করতে পারবো।সুতরাং আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি যে,কোরবানি হলো জগতের লেনদেনকে সক্রিয় করার একমাত্র উপায়।আমাকে কোনো না কোনো কিছু কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত থাকতেই হবে,যদি আমি কিছু পেতে চাই-ছোট বা বড়,ভালো বা মন্দ।আমরা আমাদের ভ্রাতৃত্বকে,বন্ধুত্বকে,সততাকে কোরবানি ক'রে খুব সহজেই গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী অসত্‍ ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারি।আবার আমরা আমাদের অসততা,কু-কামনা,খারাপ প্রবণতা ইত্যাদিকে কোরবানি ক'রে সত্যের দিকে ধাবিত হতে পারি।

এখন আমরা একটি মৌলিক প্রশ্ন করতে পারি:কোরবানি কাকে বলে?

কোরবানি হলো ত্যাগ।আল্লাহ বলেছেন যে,আমরা কখনোই তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব না,যদি আমরা তাঁর জন্য আমাদের প্রিয় বস্তুকে ত্যাগ করতে না শিখি।
এই কথাটির মধ্যেই আল্লাহ কোরাবানির মর্মার্থ লুকিয়ে রেখেছেন।আমরা হযরত ইব্রাহীম(আ.)এর কাহিনী সবাই জানি।আমরা জানি যে,আল্লাহ তাঁকে তাঁর সন্তানকে কোরবানি দেয়ার কথা বলেছিলেন এবং তিনি আল্লাহর উদ্দেশ্যে সন্তানকে কোরবানি দিয়েওছিলেন।কিন্তু আল্লাহ তাঁর কোরবানিকে কবুল ক'রে একটি পশুকে জবাই ক'রে ফেললেন এবং তাঁর সন্তানকে তাঁর কাছে ফেরত দিলেন।এথেকে আমরা বুঝতে পারি যে,কোরবানি হলো আমার কোনো প্রিয় বস্তুকে সঠিকভাবে পাওয়ার একটি উপায়।ইব্রাহীম(আ.)তাঁর সন্তানকে কেবল তখনই ফিরে পেলেন যখন তিনি তাকে আল্লাহর পথে কোরবানি করার জন্য মন স্থির করলেন।

আমরা মূসা(আ.) এর কথা জানি।ফেরাউন মূসার কওমের পুরুষদেরকে হত্যা করত এবং নারী ও শিশুদেরকে বাঁচিয়ে রাখতো।মূসা(আ.) ভূমিষ্ট হওয়ার পর পরই তার মা-ও আতঙ্কিত হলেন এই ভেবে যে,তার ছেলেকেও হত্যা করা হবে।কিন্তু আল্লাহ তাকে প্রত্যাদেশ পাঠালেন,তিনি যেন তার সন্তানকে একটি বাক্সে ক'রে নদীতে ভাসিয়ে দেন।এর পরবর্তী কাহিনী আমরা কম -বেশী সবাই জানি।সেই বাক্সটি ভাসতে ভাসতে চ'লে গিয়েছিল ফেরাউনের বাড়ির সামনে,যেখান থেকে ফেরাউনের স্ত্রী তাকে তুলে নিয়েছিলেন এবং তাকে পোষ্য পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।তবে মূসা(আ.) তার মায়ের দুধ ছাড়া আর কারো দুধ খেতে চাননি।ফলে ফেরাউনের স্ত্রী খুঁজতে খুঁজতে সত্য ঘটনাটি না জেনেও মূসা(আ.) এর মায়ের সন্ধান পেলেন।এভাবে মূসা(আ.) এর লালন-পালনের দায়ভার আবারও তার মায়ের ওপরেই বর্তালো।এ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে,মূসা(আ.) এর মা তার সন্তানকে ফেরত্‍ পেয়েছিলেন কেবল তখনই যখন তিনি তাঁকে কোরবানি করতে পেরেছিলেন।অর্থাত্‍ তাঁকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন।নিজের প্রিয়জনকে বা প্রিয়বস্তুকে সঠিকভাবে পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো তাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কোরবানি ক'রে দেয়া।এখন-আবারও- আমাদের প্রশ্ন হলো:কোরবানি কি?
তিনি বললেন,'হে মূসা!তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হল।আর আমি তো তোমার ওপর আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।যখন আমি তোমার মায়ের মনে প্রত্যাদেশ দিয়েছিলাম এইভাবে:'তুমি তাকে (শিশু মূসাকে) সিন্দুকের মধ্যে রেখে নীল সমুদ্রে ভাসিয়ে দাও যাতে সমুদ্র ওকে তীরে ঠেলে নিয়ে যায় - ওকে আমার শত্রু ও ওর শত্রুর কাছে নিয়ে যায়।'আর আমি নিজ অনুগ্রহে তোমাকে প্রিয়দর্শন করেছিলাম যে,এই অবস্থায় তুমি আমার চোখের লালিতপালিত হবে।যখন তোমার বোন এসে বলল,' আমি কি তোমাদেরকে ব'লে দেব কে একে লালনপালন করবে?'তখন আমি তোমাকে তোমার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিলাম যেন তোমার মায়ের চোখ জুড়ায় আর তুমিও কোনো দুঃখ না পাও।আর (এরপর)তুমি একটি লোককে খুন করলে,তারপর আমি তোমাকে মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি দেই।আমি তো তোমাকে পরীক্ষার পর পরীক্ষা করেছি।তারপর তুমি কয়েকবছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে বাস করেছিলে।হে মূসা!এরপর তুমি এসেছ নির্ধারিত সময়ে।
(সূরা তাহা, আয়াত :৩৬-৪০ )

আমরা জানা ঘটনার একটি অজানা রহস্যের দিকে মনোনিবেশ করতে পারি।ইব্রাহিম(আ.) এর বাবাও তার সন্তানকে কোরবানি করেছিলেন।তবে সে কোরবানি ছিল ঋণাত্মক অর্থে।তিনি তার অহমিকা বা অহঙ্কারকে টিকিয়ে রাখার জন্য তার সত্যাশ্রয়ী ছোট সন্তানকেও ত্যাগ করতেও দ্বিধা করেননি।শুধু ত্যাগ নয়,তিনি বিশাল অগ্নিকুণ্ড জ্বেলে তার মধ্যে ইব্রাহিম (আ.) কে ফেলে দিয়েছিলেন,যেন তিনি নিশ্চিহ্ন হয়ে যান।আমরা জানি যে আল্লাহ আগুনকে তার জন্য বেহেশতে রূপান্তরিত ক'রে দিয়েছিলেন।সেটি হলো আল্লাহ এবং ইব্রাহিম (আ.) এর মধ্যেকার সম্পর্কের ব্যাপার।তার বাবা তার প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছিলেন তা আমাদেরকে এখনও ভাবায়।শুরুতে তিনি বাবার দ্বারা পরিত্যাক্ত হয়েছিলেন।শেষ দিকে এসে ইব্রাহিম(আ.) আবার তার নিজের সন্তানকেও নিজে কোরবানি করলেন।কিন্তু একটু ভেবে দেখুন,এই দুই কোরবানির মধ্যে কি বিস্তর পার্থক্য ! ইব্রাহিম(আ.) বাবার আদর-ভালোবাসা পাবার সৌভাগ্য অর্জন করেননি।ফলে সেই ভালোবাসার প্রতি তার তৃষ্ণা রয়ে গিয়েছিল।এই অভাব বোধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তার মধ্যে হয়তো তার নিজের সন্তানকে পূর্ণাঙ্গভাবে ভালোবাসার একটি ইচ্ছা জেগে থাকতে পারতো।কিন্তু সন্তানকে ভালোবাসার মধ্যে আমাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বজনপ্রীতি এবং সংকীর্ণতা কাজ করে।ফলে আমরা ভালোবাসার নামে সন্তানকে প্রশ্রয় দেই।আল্লাহ তাই তাঁকে বললেন তাঁর সন্তানকে কোরবানি করতে,যেন সন্তানের প্রতি তাঁর যে মমত্ববোধ রয়েছে তা থেকে তার ভ্রান্তির অংশটুকু দূর হয়ে যায়,বাকী থাকে শুধুই বিশুদ্ধ ভালোবাসা।এই ভালোবাসা নিজের জন্য নয়,সন্তানেরই জন্য।আমরা অধিকাংশ মানুষ আমাদের সন্তানদেরকে প্রচণ্ড ভালোবাসি।কিন্তু সেই ভালোবাসার মধ্যে প্রচণ্ড পরিমাণে খাদ রয়ে গেছে।
আমরা তাদেরকে আমাদের নিজেদের চেয়েও ভালোবাসি,তবে তাদের মঙ্গলের জন্য নয়,আমাদেরই ভালোবাসার তৃষ্ণা মেটানোর জন্য।তাই তো যখন আমাদের কোনো সন্তান আমাদের পছন্দ মতো বিয়ে করতে না চায় তখন আমরা আমাদের অহঙ্কারে আঘাত পেয়ে বিমর্ষ হয়ে প'ড়ে থাকি এবং সেই সন্তানকে ত্যাগ করতেও দ্বিধা করি না।

ইব্রাহিম (আ.) এর প্রসঙ্গে আবারও ফিরে যাওয়া যাক।তিনি যখন তাঁর সন্তানকে কোরবানি করেছিলেন তখন কোরবানি সংঘটিত হয়েছিল-একটি নয় - দুটি।আল্লাহ কোরবানি করেছিলেন একটি পশুকে আর ইব্রাহিম(আ.) কোরবানি করেছিলেন তাঁর নিজের সন্তানকে।আসলে অবশেষে আল্লাহ যা করলেন সেটিই গ্রহণযোগ্য।কারণ কোরবানি মানে হলো ত্যাগ এবং আমরা কেবল আমাদের অন্তরে লুকায়িত পশুত্বকেই ত্যাগ করতে পারি।ভালো কোনো কিছুকে ত্যাগ করার অধিকার আমাদের নেই,যদিও আমরা তা অহরহ ক'রে চলেছি,যা আমাদের তরফ থেকে অনধিকার চর্চা।ইব্রাহিম (আ.) তাঁর একটি মাত্র সন্তানকে সঠিকভাবে ত্যাগ করতে পেরেছিলেন ব'লেই পরবর্তিতে গোটা মানবজাতির পিতায় রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলেন।তিনি গোটা মানবজাতির পিতা হবেন ব'লেই একটিমাত্র সন্তানের পিতা হয়ে ব'সে থাকেননি।এ দিকে ইব্রাহিম (আ.) এর পিতা আজর ভুল জিনিসটিকে কোরবানি ক'রে ফেলেছিলেন,ফলে তিনি তার নিজের সন্তানের পিতা হওয়ার যোগ্যতা হারালেন।এই দুটি বিষয়কে একসঙ্গে বিবেচনা করলে আমরা জীবনের একটি গূড় রহস্য আবিষ্কার করতে পারি।ইব্রাহিম (আ.) বৃদ্ধ বয়সে তাঁর পুত্র সন্তান লাভ করেছিলেন।সে কারণে পুত্র সন্তানের প্রতি তাঁর স্বাভাবিক দুর্বলতা ছিল।সেই দুর্বলতাকে ধ্বংস ক'রে কেবল তাঁর চিরস্থায়ী সবল অংশটুকুকে টিকিয়ে রাখার জন্যই আল্লাহ তাঁকে কোরবানির কাজে প্রবৃত্ত করলেন।

আমরা যখন কেউ একটি সন্তান লাভ করি,তখন আমরা মনে-প্রাণে এ কথাই ভেবে ব'সে থাকি যে,সে সন্তানটি শুধুই আমার।ফলে আমার সন্তান যখন বড় হবে,তখন রোজগার ক'রে শুধু আমাকেই খাওয়াবে,শুধু আমারই সেবা করবে।আমাদের এ জাতীয় ভাবনার মধ্যে শুধু সংকীর্ণতা এবং স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই নেই।এই জাতীয় প্রবণতা যেন ইব্রাহিম (আ.) এর অন্তরকে প্রভাবিত না করে,এই জন্য আল্লাহ তাঁকে তাঁর সন্তানকে কোরবানি করতে বলেছিলেন।নিজের সন্তানকে কোরবানি করা মানে মোহ নয়,ভালোবাসা কোনো অপরাধ নয়,বরং ভালোবাসাই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।কিন্তু আমাদের ভালোবাসার সংঙ্গে তার বিরাট একটি আংশ জুড়ে যে মোহ বিরাজ করছে,তা আমরা অধিকাংশ সময়ে আবিষ্কার করতে পারি না,এবং সে ব্যাপারে বেমালুম ভুলে থাকি।তাই তো ইব্রাহিম (আ.) এর এই ঘটনাটি স্মরণ ক'রে আমরা আমাদের ভ্রান্তি থেকে স'রে আসার সুযোগ পাই।

সন্তানকে কোরবানি করার একটি অর্থ হলো নিজের কাছে এই বিষয়টি স্পষ্ট ক'রে তোলা যে,এই সন্তান শুধু আমার সন্তান নয়।এই সন্তান গোটা সমাজের সন্তান।ফলে এই সন্তানকে এমনভাবে গ'ড়ে তুলবো,যেন সে আর দশটা মানুষের জন্য উপকারী হয়ে উঠে।অর্থাত্‍ আমি আগে থেকেই স্বীকার করার জন্য প্রস্তুত থাকব যে,এই সন্তান শুধু আমারই সেবা করবে না,গোটা মানবজাতির সেবা করবে।এই সন্তান শুধু আমার জন্যই পরিশ্রম করবে না,গোটা মানবজাতির জন্য পরিশ্রম করবে।বলা বাহুল্য,আমরা যখন ঈদুল আজহার সময়ে হাজার হাজার পশু কোরবানি দেই,তখন এই ধারনাগুলি আমাদের মাথার মধ্যে আসে না,বরং আমরা কোরবানির একজাতীয় প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হই - কে কত বড় পশু কোরবানি দিতে পারে,কে কোরবানির উদ্দেশ্যে কত বেশি টাকা ব্যায় করতে পারে।সেই প্রতিযোগিতা আমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন ক'রে রাখে।তাই তো আল্লাহ রাব্বুল 'আলামীন বলেছেন যে,তাঁর কাছে কোরবানির পশুর রক্ত পৌছায় না,পৌছায় আমাদের চিত্ত বা হৃদয়।

"আর উটকে তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি।তোমাদের জন্য ওতে মঙ্গল রয়েছে।সুতরাং সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে ওদেরকে জবাই করার সময় তোমরা আল্লাহর নাম নাও।যখন ওরা কাত হয়ে প'ড়ে যায় তখন তোমরা তা থেকে খাও আর খাওয়াও যে চায় না তাকে,আর যে চায় তাকেও।এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদেরকে অধীন ক'রে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।আল্লাহর কাছে ওদের মাংস বা রক্ত পৌছায় না,বরং পৌছায় তোমাদের ধর্মনিষ্ঠা।এভাবে তিনি ওদেরকে তোমাদের অধীন ক'রে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর,এজন্য যে তিনি তোমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন।সুতরাং তুমি সত্‍কর্মপরায়ণদের খবর দাও।"
                                                                                                                                                    (সূরা হজ্জ,আয়াত:৩৬-৩৭)

এ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে,কোরবানি কোনো বাহ্যিক কাজ নয়,কোরবানি হলো অন্তরের ভিতরের কাজ।আবার এর মাধ্যেমে আমরা এও বলতে চাচ্ছি না যে,বাহ্যিক অর্থে আমরা কোরবানি বলতে যা বুঝি,তা করা যাবে না।বিষয়টি তা নয়।সব বাহ্যিকতা একটি উপায় মাত্র -এই কথাটি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে।আমাদের আসল লক্ষ্য হলো অন্য কিছু।সেই লক্ষ্যকে ভুলে গিয়ে শুধু বাহ্যিকতার আশ্রয় নিলে তা হবে নিছক সামাজিক আচরণ এবং কৃষ্টিকালচারের চর্চা।এই কথাগুলিকে মনে রেখে আমরা যদি কোরবানি করি,তাহলে আমাদের কোরবানি আমাদের জীবনকে পবিত্র ক'রে তুলবে।আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু এবং ব্যক্তিদের সাথে আমাদের সম্পর্ককে বিশুদ্ধ ক'রে তুলবে।সম্পর্ক ত্যাগ করা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়।কিন্তু সম্পর্ক থেকে উদ্ভুত মোহ এবং মোহাচ্ছন্নতাকে ত্যাগ করা আমাদের দায়িত্ব।



শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১১

খোঁপার মত ফুলদানি আর নেই(এস. এম. জাকির হুসাইন)

খোঁপাটাকে এগিয়ে দাও                 এই নাও

            কী দেব যে?
ইচ্ছে করে দাঁড়িয়ে থাকি আঙুল গুঁজে।

           আবার ভাবি--তাও কি হয়?
           খোঁপার জন্য আঙুল তো নয়,
                                     ফুল,
তবু কেন হঠাত্‍ তুমি এলিয়ে দিয়ে চুল
          খোঁপাটাকে দিলে খুলে?
এই দেখ এক ফুল রয়েছে আমার এ আঙুলে
          তোমার খোঁপায় পরিয়ে দিতাম যেই,
বুঝিয়ে দিতাম খোঁপার মত ফুলদানি আর নেই।

"কল্পকণা"(রোহেল পাবলিকেশন্স,৩৮/২ ক,বাংলাবাজার,ঢাকা)