পৃষ্ঠাসমূহ

কোরাআনের আলোকে সাধনা এবং ধ্যান-2(সংক্ষিপ্তাকারে)(এস.এম. জাকির হুসাইন)



২১.সাধনা এবং ধ্যানকে যদি একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সংঘটিত হতে হয়,তাহলে তা অবশ্যই জীবন থেকে,জীবনের দৈনন্দিন প্রক্রিয়া থেকে কোনোভাবেই আলাদা হতে পারবে না।যদি সাধনা এবং ধ্যান একই প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতি হয়,তবে অবশ্যই তা কেবল মসজিদে বা মন্দিরে বা অন্য কোথাও বনে-জঙ্গলে সংঘটিত হতে পারবে না।সাধনা ধারনাটির মধ্যেই গোটা জীবন জড়িত।ধ্যানের ধারনাটির মধ্যে জড়িত 'অনেকের মধ্যে আমি একা' এই বোধটি।
২৫.ধৈর্যধারণ করা একটি সাময়িক চাকরির মতো।আমরা যদি পর্যাপ্ত ধৈর্য ধরতে না শিখি,তাহলে আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে আমাদেরকে তা শিখিয়ে দেয়ার জন্য বিপদ আপদকে সামনে এনে হাজির করেন।
২৭.সাধনা জীবন থেকে আলাদা কিছু নয়।কোনো ক্রমেই নয়।
২৮.আমরা আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে অনেক কিছু শিখি এবং শেখাই।তা সত্ত্বেও কোনো কাজ হচ্ছে না।তা এজন্যে যে,আমরা শুধু ভালো কাজের উপদেশ দেই,কিন্তু খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করি না।আর যতদিন
আমরা এই দুটি আদেশ একই সাথে পালন করতে না পারছি,ততদিন কোনো প্রচার প্রচারণায় কোনো কাজ হবে না।আল্লাহর কথাকে অমান্য 'রে আল্লাহকে ভালোবাসার কোনো মানে হয় না। সেটি নিছক অজ্ঞতাপ্রসূত আবেগ।আমরা মানুষকে ভালো পথে ডাক দেই,এতে কোনো অপরাধ নেই,কিন্তু একই সঙ্গে খারাপ কাজকে নিষেধ করতে হবে।



পৃষ্ঠা-৩০.আমরা যখন ধ্যান নামক বস্তুটিতে বসি.তখন ঠিক হিমালয় পর্বতের মতো মাথা উঁচু 'রে,অত্যন্ত শক্ত হয়ে সোজা হয়ে যাই,যেন আমার মতো সাহসী পুরুষ এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই।ধ্যানে সাহসের চর্চা পূর্ববর্তী ধর্মে প্রযোজ্য ছিল।আমাদের ধর্ম পালন করতে হয় জীবনের বাস্তব গণ্ডীর মধ্যে,কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে,সবচকিছু পালনের মধ্যে দিয়ে।সেখানে আল্লাহকে ভয় করার গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী।
৩২.নিজের মন থেকে মানুষ যা বিদূরিত করতে পারে না,বাইরে থেকে তা কোনোভাবে কিছু কাল লুকিয়ে রাখলেও আজ হোক আর কাল হোক,এসে হাজির হয়।আর বাইরে যা কিছু ঘটে,তা আসলে দূর কোনো স্থান থেকে আসে না,বরং ভিতর থেকেই বাইরে বেড়িয়ে পড়ে।
৩৩.আমরা মনের মধ্যে আল্লাহর বিধানের সঙ্গে যুদ্ধ করি,নিজেদের অনুভূতির সঙ্গেও যুদ্ধ করি।আমরা নিজেদের অনুভূতির সঙ্গে জিততে না পারলে বাইরে আল্লাহর বিধানের সঙ্গে যুদ্ধ করি।এবং তাকে হয় পরিহার করি,না হয় বিলুপ্ত করার চেষ্টা করি।আবার আল্লাহর বিধানের সঙ্গে নিজেকে সংযুক্ত করতে গিয়ে,নিজেকে তার মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আমরা অনেক সময়ে আমাদের অনুভূতির সাথে বিরোধিতা করি,যা চরমপন্থায় রূপ নেয়।এইরূপ বিরোধিতা অসংগত।
৩৫.ধৈর্যধারণ হলো সফলতার উপায়,আত্মরক্ষার উপায় নয়। ধৈর্যধারণ যেখানে আত্মরক্ষার উপায়,সেখানে তা দূর্বলতা এবং স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৩৬.আল্লাহকে ভয় না করলে ধৈর্য এক পর্যায়ে অহংকার এবং আত্ম-অহমিকায় রূপ নেয়।এবং তাই- দ্বিগুণ শক্তি হয়ে অহংকারকে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
৩৮.যে আরাম আয়েশের গৃহ ত্যাগ 'রে নফসের এবং ইবলিসের দ্বারা নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও সাধনার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং তার আনন্দগুলি নিহত হয়,সময়গুলো নিহত হয়,তার সচ্ছলতা নিহত হয়,তাহলে আল্লাহ এক সময়ে তাকে সবকিছু ফিরিয়ে দেবেন।
৪০.সত্যকে আমরা অনেকেই জানি না,কিন্তু সত্যের মধ্যে দিয়ে ঠিকই আমরা অতিক্রম করছি,ঠিক যেন মহাসমুদ্রের মধ্যে থেকেও আমরা জানি না যে আমরা মাছ-সাঁতার কাটছি।সেই না-জানার কারণে আমাদের জন্য জীবন-যাপন সহজ হচ্ছে।এই সহজের সবচেয়ে সহজতম মানসিক যে অভিমুখিতা,যে ক্রিয়াকাণ্ড,তা- বিশ্বাস।
৪১.আমি যদি আমার নফসের আনন্দ-ফুর্তি লোভ-লালসা এসব থেকে দূরে 'লে যাই,হিজরত করি,এবং কন্টকময় পথে অত্যন্ত সাবধানে আল্লাহকে ভয় করতে করতে চলি,তাহলে এই চলার ফলশ্রুতি হিসেবে আমার মধ্যে একপর্যায়ে এমন যোগ্যতা বিকশিত হবে,যখন আল্লাহ আমাকে বলবেন-এবার ঘরে ফিরে যাও।এবার একটু আরাম আয়েশ কর।একটু ভোগ কর এবং তোমাকে কোনো অনিষ্টই স্পর্শ করবে না।
৪২.কঠিন পথে চলতে চলতে নিজের মনের মধ্যে সঞ্চিত বিভিন্ন কু-প্রবণতাপূর্ণ বা ঋণাত্মক প্রবণতাপূর্ণ শক্তিপুঞ্জকে সঠিকভাবে পুনর্সজ্জিত করা অত্যন্ত দরকার।এবং এই পুনর্সজ্জিত করার এক পর্যায়ে মন শক্তিহীন হয়ে পড়ে,অন্তর শুকিয়ে যায়,দেহটি সাময়িকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে।অর্থাত্কতকটা মরুভূমির মতো হয়ে পড়ে।চিন্তা কাজ করে না।বোধ সক্রিয় থাকে না।একটি প্রতিষ্ঠিত অবস্থাকে একেবারেই উল্টে দিতে গেলে যে-কোনো বিন্দুতে বা কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে এইরূপ ঘটনা ঘটবেই।যে-কোনো উল্টোমুখী পালা-বদলের ক্ষেত্রে-সামাজিক হোক,রাজনৈতিক হোক,সামরিক হোক,ব্যক্তিগত হোক,সাংসারিক হোক - এই ঘটনা ঘটবে।
৪৫.আমরা ভালো কাজগুলি করছি তো সুখ-সাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি হচ্ছে।আমরা খারাপ কাজ করছি তো বিপদ-আপদ সৃষ্টি হচ্ছে।তাহলে এখান থেকে আল্লাহকে দেবার মতো কি আছে?তিনি মনিব।তাঁর জন্যেই তো আমরা সৃষ্টি।তিনি নিজের উদ্দেশ্যেই আমাদের সৃষ্টি করেছেন।তাহলে আমরা তাকে কি দিতে পারি?বিষয়টি হলো,তাঁর জন্যেই আমাদের অন্তঃকরণ,নিয়ত।এটি হলো ধ্যানের তথা সাধনার চূড়ান্ত কথা।
৪৭.আমরা করি কি,হুট 'রে নামাযে দাড়াই।লোক দেখানো যাকাত দেই।এবং মনে করি যে এই করতে করতেই মন ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু আসলে কি তাই?চিত্তটিকে বিশুদ্ধ 'রে সেই বিশুদ্ধ চিত্তই তো আমি নামাযের কাঠামোর মধ্য দিয়ে তাঁকে উপহার দেব।আমি যদি চিত্ত ঠিক না 'রে নামাযে দাঁড়াই,তাহলে আমি নামাজে দাঁড়িয়ে তাঁকে কি দিচ্ছি?যা দেয়ার কথা তা নিয়েই তো আমি নামাজে যাইনি।
৪৮.আমরা যদি সাফল্য চাই,তো সেটিই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওনা।সঠিক জিনিসটি কামনা করতে পারাই অন্তরের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা।
(সমাপ্ত)
পাঠকগণকে বিনীত অনুরোধ করছি সংক্ষিপ্ত কখনই পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না।বইটি সম্বন্ধে ধারনা দেয়াই ছিলো আমার উদ্দেশ্য।সম্ভব হলে বইটি সংগ্রহ করে 'ড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি।এই লেখকের বই প্রকাশ করে ৩৮,, বাংলাবাজার ঢাকা, রোহেল প্রকাশনী জ্ঞানকোষ প্রকাশনী